গ্যাসের দাম নির্ধারণে অবিবেচক হবে না বিইআরসি: চেয়ারম্যান
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রাকৃতিক গ্যাসের ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের গণশুনানি শুরু হয়েছে। এবার বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম শিল্প কারখানায় ১১৭ ভাগ এবং বাসাবাড়িতে ১১৬ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
এখন প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৩৬ পয়সায়। গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৩ টাকা ১১ পয়সা বাড়িয়ে ১২ টাকা ৪৭ পয়সা নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি (মূল্যায়ন) কমিটি।
শুনানিতে বলা হয়, পেট্রোবাংলা গ্যাসের ঘনমিটার প্রতি ১৫ টাকা ৩০ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে।
মূল্যায়ন কমিটির প্রধান দিদারুল আলম বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের গ্যাস আমদানির তথ্য যাচাই করা হয়েছে। সে হিসাবেই এই দামের সুপারিশ করেছি।
সোমবার (২১শে মার্চ) রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের শহীদ এ কে এম শামসুল হক খান মেমোরিয়াল হলে চার দিনব্যাপী এই গণশুনানি শুরু হয়েছে। গণশুনানি গ্রহণ করছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে শুনানি গ্রহণে উপস্থিত ছিলেন সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান, মোহাম্মদ আবু ফারুক ও মো. কামরুজ্জামান।
বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) তাদের প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে। পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। এরপর কমিশন তাদের মূল্যায়ন রিপোর্ট পেশ করে।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, স্পর্ট মার্কেট থেকে আনা গ্যাসের দাম বেড়েছে ৫-৬ শতাংশ। এ জন্য সব গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়াতে হয় এটা বিশ্বাসযোগ্য (নয়)! তারা গোঁজামিল দিয়ে হিসাব দেখাচ্ছে, এসব হিসাব বাস্তবসম্মত নয়। প্রয়োজন হলে ওই পরিমাণ এলএনজি আমদানি না করার পক্ষে আমরা। তবুও দাম বাড়ানো উচিত হবে না।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল তার স্বাগত বক্তব্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ব প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো শিল্প কারখানায় ১১৭ ভাগ এবং বাসাবাড়িতে ১১৬ ভাগ গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করছে। তবে কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ক্ষেত্রে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবে। এবার মূল্য নির্ধারণে অবিবেচক হবে না। শুনানির শুরুতে বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, বিইআরসি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণ করে আসছে। কমিশন হচ্ছে আধাবিচারিক ব্যবস্থা, এখানে যুক্তি ও প্রমাণের মাধ্যমে মূল্যহার নিধারণ করা হয়।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য নির্ধারণে গণশুনানি শুরু হয়েছে। আগামী চারদিন শুনানি চলবে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের প্রস্তাবনা উত্থাপন করবে। আমরা শুনব। আমাদের বিচারক টিম থাকবে। চুলচেরা বিশ্লেষণের পরই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমরা অমানবিক হবো না।
পেট্রোবাংলা প্রস্তাবিত দরের ওপর গণশুনানি শেষে বিকালের অধিবেশনে গ্যাসের সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়। শুনানিতে গ্যাসের সঞ্চালন চার্জ প্রতি ঘনমিটারে শূন্য দশমিক ৪২৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে শূন্য দশমিক ৭৩০৭ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে শূন্য দশমিক ৮৬৫৮ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কম্পানি (জিটিসিএল)। এর বিপরীতে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য শূন্য দশমিক ৪৮৯০ টাকা করার সুপারিশ করেছে।
শুনানিতে জিটিসিএল জানায়, গ্যাস ট্রান্সমিশন চার্জ (গ্যাস সঞ্চালন ট্যারিফ) প্রস্তাবিত দরে না বাড়ানো হলে, জিটিসিএলের পক্ষে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন, কম্প্রেসর স্টেশন, গ্যাস ট্রান্সমিশন গ্রিড ও আনুসঙ্গিক স্থাপনা পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হবে না।