গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে শুনানি: হট্টগোলে বিশৃঙ্খলা, প্রতিবাদ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা (বুধবার, ২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫):

নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে শুনানি করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

শুনানিতে গ্যাসের দাম না বাড়ানো এবং শুনানি প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে উদ্যোক্তা সহ বিভিন্ন শ্রেণীর ভোক্তারা। এক পর্যায়ে সেখানে হট্টগোলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।

রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে বুধবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত গণশুনানিতে এই অবস্থা হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। দাম বাড়ালে শিল্পকারখানা চালানো সম্ভব হবে না।

গণশুনানিতে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবীরা অংশ নেন। তারা লোকসান কমাতে চুরি কমানোর আহ্বান জানান।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, জ্বালানি দক্ষতার নিরীক্ষা করে যথাযথ খরচ বের করা উচিত। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম প্রায় ৫০ মিনিট কথা বলেন। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়লে সব পণ্য আমদানি করে দেশ আমদানিনির্ভর হয়ে যাবে। এই প্রস্তাব ভয়ংকর গণবিরোধী। এই গণশুনানি বন্ধ করতে হবে।

শামসুল আলমের বক্তব্যের সময় ব্যবসায়ী, ক্যাব এবং অন্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা শুনানি বন্ধের দাবিতে শ্লোগান দেন। বক্তব্যের শেষে ৩ দফা দাবি জানিয়ে শামসুল আলম অবশিষ্ট পর্ব থেকে ওয়াকআউট করেন।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আগামী রোববারের মধ্যে বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে। না হলে আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনসহ (পেট্রোবাংলা) দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি আগেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। সেই প্রস্তাবের উপর হলো গণশুনানি।

নতুন শিল্পকারখানার জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা।

উৎপাদনমুখী শিল্প ছাড়া কর্মসংস্থান তৈরি হবে না জানিয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী বলেন,  গ্যাস না পাওয়ায় ৩৫ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতা কমেছে কারখানার। সুতা তৈরি করতে যে খরচ হচ্ছে, তার চেয়ে কম দামে ভারত থেকে কাপড় আমদানি করা যায়।

দাম বাড়ানোর উদ্যোগকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, প্রাকৃতিক গ‍্যাসের ওপর ভিত্তি করেই নিট পোশাক সর্বোচ্চ রপ্তানি খাতে পরিণত হয়েছে। শিল্প ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।

ভ্যাট ও গ‍্যাসের দাম কমান দাবি করেন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।

 আগে গ্যাস দেওয়ার সক্ষমতা তৈরি করার কথা বলেন সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মঈনুল ইসলাম।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, গ্যাস দিতে না পারায় কারখানাগুলোতে সক্ষমতার ৩৫-৪০ শতাংশ উৎপাদন কম হচ্ছে।

শুনানি গ্রহণ করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, সদস্য মিজানুর রহমান, ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, মো. আব্দুর রাজ্জাক ও শাহীদ সারোয়ার।

ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের উদ্বেগের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানান বিইআরসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন,

প্রস্তাবটি কমিশন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বার্তা টোয়েন্টিফোরের বিশেষ প্রতিনিধি সেরাজুল ইসলামসহ অন্যরা এসময় বক্তব্য রাখেন।