গ্যাসের দাম বাড়িয়ে এলপিজিতে ভর্তুকি
গ্যাসের দাম বাড়লে তরল বোতলজাত গ্যাসে (এলপিজি) ভর্তুকি বাড়ানো হবে। গ্রাম এবং শহরের জ্বালানি ব্যবহারে সমতা আনতে এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে বর্তমান আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে শুধু ক্যাপটিভ বিদ্যুতে দেয়া গ্যাসের দাম বাড়িয়ে এই সমন্বয় করা হতে পারে।
জ্বালানি বিভাগ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ও সংশ্লিষ্টরা এবিষয়ে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন থেকে গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণের পরে এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ফেব্রুয়ারি মাসে বিতরণ কোম্পানিগুলোর গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানী করেছে বিইআরসি। সে সময় গ্যাসের দাম বাড়ানোর পক্ষে কোনো যুক্তি দিতে পারেনি গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো।
সরকারি ও বেসরকারিভাবে বোতল গ্যাস বিক্রি করে। যে এলাকায় পাইপ লাইনে গ্যাস নেই দেশের সেই এলাকায় বোতল গ্যাস রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়। সরকারি খাতে বিপিসি তেল কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে এলপিজি সরবরাহ করে। আর বেসরকারিভাবে এলপিজি বিক্রি করে বসুন্ধরা এলপিজি, ক্লিনহিট, যমুনা স্পেটেক, টোটাল গ্যাস এবং বাংলাদেশ অক্সিজেন কোম্পানি (বিওসি)।
আবাসিক গ্যাসের প্রতি ইউনিট (এক হাজার ঘনফুট) গ্যাসের বর্তমান বিক্রয়মূল্য ১৩৯ টাকা ৬২ পয়সা। একই পরিমাণ শক্তি উৎপাদনে এলপিজির দাম এক হাজার ৮৫৪ টাকা ১৬ পয়সা, কেরোসিনের দাম এক হাজার ৮৬৫ টাকা ৫০ পয়সা এবং জ্বালানি কাঠে খরচ হয় ৪৪৫ টাকা ১৯ পয়সা।
সরকারি এলপিজি সাড়ে ১২ কেজি ওজনের প্রতি বোতল ৭০০ টাকায় বিক্রি করার কথা। সারাদেশেই এই এক দামে বিক্রিমূল্য ঠিক করেছে বিপিসি। কিন্তু সে দামে কোথাও বিক্রি হয়না। প্রায় দ্বিগুণ দামে এলপিজি বিক্রি হয় বাজারে। বেসরকারি বোতলের দাম এক হাজার ৪০০ টাকা। কিন্তিু বিক্রি হয় আরও বেশি দামে।
কিন্তু যে এলাকায় পাইপে গ্যাস আছে সেখানে একজন গ্রাহক একমাসে দিচ্ছে মাত্র ৪৫০ টাকা। বেশি গ্যাস ব্যবহার করেও কম টাকা দিচ্ছে দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠি। এক অংশের জনগোষ্ঠি কম উপযোগ নিয়ে বেশি টাকা দিচ্ছে আর অন্য অংশের জনগোষ্ঠি বেশি উপযোগ নিয়ে কম টাকা দিচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, গ্যাস ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে যথার্থ অর্থনৈতিক মহৃল্য নিয়ে এলপিজি ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিতরণ করলে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এতে ২০ লাখ বোতলে ভর্তুকি দেয়া যাবে।
বিপিসির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা বলেন, সরকারিভাবে এলপিজি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরবরাহ সরবারিভাবে আরও বাড়লে দাম কিছুটা কমে যাবে। ক্যাপটিভ বিদ্যুতে দেয়া গ্যামের দাম বাড়িয়ে তা বোতলে দেয়া যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, বেসরকারিভাবে যারা এলপিজি বিক্রি করতে বিপিসির কাছ থেকে লাইসেন্স নিলেও কত দামে বিক্রি করবে তা নিয়ন্ত্রণ করার সযোগ নেই।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, আবাসিক পর্যায়ে গ্যাসের এক চুলার জন্য এক হাজার টাকা এবং দুই চুলার জন্য দেড় হাজার টাকা দাম নির্ধারণ করা যেতে পারে। এরপর এক চুলার বিল থেকে ৫০০ টাকা এবং দুই চুলার বিল থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে আলাদা তহবিলে রাখতে হবে। সেখান থেকে এলপিজিতে ভর্তুকি দেয়া যেতে পারে।
বর্তমানে দেশে প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন এলপিজির চাহিদা আছে। এরমধ্যে ৯০ হাজার মেট্রিক টন সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বিপিসি করছে ২০ ভাগ আর বেসরকারিভাবে করা হচ্ছে ৮০ ভাগ।
এরআগে গ্যাসের দাম বাড়ানোর শুনানীর সময় বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনের দাবি করেছিল ভোক্তা প্রতিনিধিরা। শিল্প খাতে ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে বাড়ানোর আলোচনা হয়। এ ছাড়া এলপিজির ওপর থেকে সব ধরনের রাজস্ব তুলে নেয়ার আবেদন জানানো হয়। ক্যাপটিভ বিদ্যুতে গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বৈষম্য আছে। কিছু চলে গ্যাসে কিছু ডিজেলে। যারা গ্যাস ব্যবহার করেন তাদের খরচ কম পড়ে। এই অসম প্রতিযোগিতা কমাতে ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৪০ টাকা করার প্রস্তাব করেছিল বিতরণ কোম্পানিগুলো। এছাড়া গ্যাসের দাম গড়ে ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল সকল বিতরণ কোম্পানি। এছাড়া এলপিজি থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে প্রতি সিলিন্ডারে অন্তত ৩০০ টাকা কমে যাবে।