অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারিদের সিলিণ্ডার উপহার

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের ভতুর্কী দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার দেয়া হচ্ছে। এলাকার সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান এই উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রায় দশ হাজার পরিবারকে এই সুবিধা দেয়া হবে। একই সাথে আগামী দুই মাসের মধ্যে অবৈধ সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় অবৈধ ভাবে স্থাপিত গ্যাস বিতরণ লাইন বিচ্ছিন্ন/অপসারণের বিষয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই ঘোষণা দেন।
তিনি তার এলাকার অবৈধ গ্যাস (আবাসিক ও বাণিজ্যিক) ব্যবহারকারীদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে দুই মাস সময় নেন। ওই সময়ের মধ্যে সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
বন্দর উপজেলায় অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে গ্যাস ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। ওই ১০ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগধারীকে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে পুনর্বাসনের জন্য প্রাথমিক ভাবে আড়াই কোটি টাকা খরচ হবে। এই টাকার মধ্যে এক কোটি টাকা বিকেএমইএ, এক কোটি টাকা নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এবং বাকী ৫০ লাখ টাকা নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য  সেলিম ওসমান তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বিকেএমইএ এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতিও।

মত বিনিময় সভায় জানানো হয়, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এণ্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর হিসেবে অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলায় ২৩ হাজার অবৈধ সংযোগ আছে। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বন্দর উপজেলায় রয়েছে প্রায় ১০ হাজার অবৈধ সংযোগ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিম ওসমান বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আবাসিকখাতে নতুন কোন সংযোগ দেয়া হবে না। এটা হতে পারে না। এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না। পুরাতন গ্রাহকরা গ্যাস পাবে আর নতুনরা পাবেই না এটা ঠিক নয়। তিনি বলেন,   ভোটের রাজনীতি করি। যাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে তাদের ভোট হারাবো। তাই বলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ এভাবে নষ্ট হতে দিতে পারি না। যারাই অবৈধ ভাবে সংযোগ নিয়েছে তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অবহিত ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সেলিম ওসমান বলেন, যারা অবৈধ ভাবে সংযোগ নিয়ে গ্যাস ব্যবহার করছেন তাদেরকে গ্যাস ব্যবহার থেকে বঞ্চিত না করে গ্যাস সিলিন্ডারে ভতুর্কীর মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে। একাজে একালীন খরচ হবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা (১০ হাজার অবৈধ সংযোগধারীদের পুনর্বাসনে জন্য)।
সভায় অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে যে গ্যাস সাশ্রয় হবে সেগুলো বিভিন্ন মিল-কারখানায় দেবার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বৈধ আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবি জানান। অন্যথায় ব্যবসায়িদের নিয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ভিন্ন পন্থায় মিল-কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে হলে তাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এণ্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নওশাদ ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এসব অবৈধ সংযোগগুলো নেয়া হয়েছে। ওইসব কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে তিতাস গ্যাসের ১৩ জন কর্মকর্তাকে চাকুরিচ্যুত এবং ৩৫ জন ঠিকাদারকে কালো তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক অবৈধ গ্রাহকদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে বৈধ গ্রাহকরা আবারো স্বাভাবিক ভাবে গ্যাস পাবেন। তবে শীতকালে গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা বিঘ্নিত হয় শীতের কারণে।
জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সহ সভাপতি মঞ্জুরুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গাউসুল আজম, বন্দর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং নাসিকের বন্দর অংশের সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।