গ্যাস-বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর দাবি এফবিসিসিআই
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মুল্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিদ্যুৎ খাতে অস্বচ্ছতা, অদক্ষতা, অনিয়মের করতে খরচ বাড়ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াট, কিন্তু বর্তমানে চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আমূল সংস্কার চেয়ে বলা হয়, এ খাতের বিরাজমান অব্যবস্থাপনার ‘অহেতুক দায়ভার’ জাতীয় অর্থনীতি ও জনগণের জীবন জীবিকার উপর সংক্রমিত করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না।
করোনা মহামারী আর ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে যে সঙ্কট তৈরি করেছে, তার মধ্যে গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে শিল্প উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যাবে।
জ্বালানি তেল ও এলএনজির দাম স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে আসার পর বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে এফবিসিসিআই।
সংগঠনের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, বৈশ্বিক মহামারী ও ইউক্রেন-রাশিয়ার সঙ্কটে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, পরিবহন ব্যয়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ব্যবসা পরিচালনার খরচ বেড়েছে। হয়েছে মূল্যস্ফীতি। এই দুঃসময়ে পাইকারি পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের মুল্যবৃদ্ধির প্রভাব মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে।
তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধির এখন সঠিক সময় নয়। অন্তত ছয় মাস সময় নিয়ে বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা দরকার। এখন দাম বাড়ালে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। দেশীয় শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে।
শিল্প রক্ষায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস নিয়ে সিদ্ধান্তটি আমলাদের পরিবর্তে রাজনীতিকদের মাধ্যমে নিতে আহ্বান জানায় তারা।
জসিম উদ্দিন কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, এটির এখন আর প্রয়োজন নেই। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দ্রুত বন্ধ করা প্রয়োজন। এক সময়ে দরকার ছিল। এখন তো আর নেই। ক্যাপাসিটি এবং ডিমান্ড চার্জসহ মূল্য পরিশোধিত ৭০ শতাংশ অলস উৎপাদন কেন্দ্র অব্যাহত রাখা হয়েছে, যা জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লে ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান চালানোর ব্যয় বেড়ে প্রতিযোগী দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। ফলে রপ্তানির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এতে তৈরি পোশাকের প্রতিযোগী ভিয়েতনামের সঙ্গে টিকে থাকা যাবে না।
বাংলাদেশ টেক্সটাইলস মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আমাদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি বিইআরসি।তারা আমাদের বলেছে আপনাদের কোনো প্রশ্নের উত্তর নেই।
তিতাসের বার্ষিক প্রতিবেদনের আর্থিক তথ্য তুলে ধরে বিকেএমইএ সহসভাপতি মোহাম্মাদ হাতেম বলেন, মোট সরবরাহ করা গ্যাসের ৫৪ শতাংশই ক্যাপটিভসহ শিল্পে ব্যবহার হয় । মোট আয়ের ৬৫ শতাংশই শিল্প খাত থেকে যায়। পেট্রোবাংলা ৩০০ কোটি টাকা নিয়েছে তিতাসের কাছ থেকে গ্যাস উন্নয়নের নামে। কিন্তু সেই অর্থ ব্যবহার করেনি।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে গ্যাস বা বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর সময় এখন না।
আরও কয়েক মাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, এর প্রভাব পর্যালোচনা করে তারপর আলোচনার মাধ্যমে দাম নির্ধারণের উদ্যোগে নেওয়া যেতে পারে।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের (নাসিব) সভাপতি মির্জা নুরুল গনী শোভন বলেন, মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি আমলারা করেছেন। এখানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারকেই সিদ্ধান্ত হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ, আবাসন খাতের ব্যবসায়ী আলমগীর শামসুল আলামিন বক্তব্য দেন।