গ্রামাঞ্চলেও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই
গ্রামাঞ্চলেও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) বিদ্যুৎ বিক্রি করে লাভ করছে। তবে পাইকারি পর্যায়ে প্রস্তাবিত দাম বাড়ানো হলে দশমিক ২৭ ভাগ লোকসান হবে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির পর্যালোচনায় এই তথ্য জানানো হয়েছে। রোববার বিইআরসি টিসিবি মিলনায়তনে আরইবি’র বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের উপর গণশুনানী করে। শুনানীতে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
শুনানীতে, ভর্তূকি কমিয়ে আনতে আরইবি ২৫ দশমিক ৮৯ ভাগ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু হিসাব পর্যালোচনা করে মূল্যায়ন কমিটি বলছে আরইবি’র লোকসানই নেই। কমিটি জানায়, যদি সিস্টেম লস ১৩ শতাংশ থাকে আর বিদ্যুতের পাইকারি ও সঞ্চালন মূল্য পাঁচ দশমিক ১৫ এবং এক দশমিক ৫৩ শতাংশ বাড়ানো হয় তবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আরইবির পরিচালনার জন্য খরচ হবে ১১ হাজার ১৪০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এই সময় আয় হবে ১১ হাজার ১১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ২৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বা দশমিক ২৭ ভাগ কম থাকে। পাইকারি ও সঞ্চালনে দাম না বাড়ালে চলতি অর্থবছরে ৭২টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে লাভ হবে ৩৬৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
কমিশন চেয়ারম্যান এ আর খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানীতে কমিশনের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. মাকসুদুল হক ও রহমান মুরশেদ উপস্থিত ছিলেন। গণশুনানীতে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন আরইবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈনউদ্দিনসহ অন্য কর্মকর্তারা।
এদিকে গতকাল সকালে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) শুনানী হয়। ডেসকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শাহেদ সরওয়ারসহ অন্য কর্মকর্তারা তাদের প্রস্তাব উপস্থাপন করে। ডেসকোও লাভ পর্যায়ে আছে বলে বিইআরসি মূল্যায়ন কমিটি জানিয়েছে। কমিটি জানায়, পাইকারি ও সঞ্চালনে দাম বাড়ালেও ডেসকোর লাভ হবে। সে জন্য ডেসকোর গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম কোনভাবেই বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। পাইকারি ও সঞ্চালনে দাম বাড়ানোর পরও ডেসকো’র ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬৮ কোটি নয় লাখ টাকা লাভ হবে। আর যদি কোন দাম বাড়ানো না হয় তবে নীট মুনাফা হবে ২৩৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এই লাভ হওয়ার পরও শুনানীতে ডেসকো ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
গ্রাহকদের পক্ষ থেকে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি উপদেষ্টা এম. শামসুল আলম বলেন, আরইবি ও ডেসকো মুনাফা করছে। লোকসান নেই। তাই গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো উচিত হবে না।
গতকাল বিদ্যুতের সকল বিতরণ কোম্পানির শুনানী শেষ হয়েছে। বিইআরসি মূল্যায়ন কমিটি জানিয়েছে, বিতরণ পর্যায়ে পিডিবি ছাড়া প্রত্যেক কোম্পানি লাভ করছে। পাইকারি ও সঞ্চালনে দাম না বাড়ালে কোন কোম্পানির বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।
কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ১০ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে যাচাই বাছাই শেষ করে রায় দেয়ার চেষ্টা করা হবে। নতুন যে দাম নির্ধারণ করা হবে তা ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবত পারে।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে এবার প্রতিটি বিতরণ কোম্পানি ও সংস্থা কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর সুবিধা কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে এক থেকে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারিদের বিশেষ সুবিধা পাওয়া গ্রাহক বিবেচনা করা হয়। কিন্তু প্রস্তাবে তা ৫০ থেকে কমিয়ে ৩০ ইউনিট পর্যন্ত করা হয়েছে।