চট্টগ্রামে গ্যাস সংকটে ভোগান্তি

চট্টগ্রামে হঠাৎ করে গ্যাস-পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গত দুই দিন ধরে শিল্প কারখানা ও বাসাবাড়িতে গ্যাস-পানির সংকটের কারণে নাকাল নগরবাসী। দেশের সর্ববৃহৎ গ্যাস ফিল্ড বিবিয়ানা থেকে গ্যাস না আসার কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এ গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানা যায়। এ ছাড়া গ্রীষ্মের খরতাপে চট্টগ্রাম ওয়াসা পানির চাহিদা মেটাতে না পারায় পানি নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। ভূগর্ভে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ সংকট আরো বেড়ে গেছে বলে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ রেশনিং পদ্ধতিতে নগরীতে পানি সরবরাহ করলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। ফলে তীব্র এ গরমে পানির জন্য হাহাকার করছে চট্টগ্রাম নগরবাসী।
জানা যায়, নগরীতে গত শনিবার রাত থেকেই গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড ২-১ দিনের মধ্যে এ সংকট দূর হবে বলে আশ্বাস দিলেও গত ৩ দিনেও সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং এ সংকট আরো তীব্র হচ্ছে। নগরীর কিছু কিছু জায়গায় গ্যাস সরবরাহ থাকলেও নগরীর অক্সিজেন, ঝাউতলা, বাকলিয়া, জামালখান, রহমতগঞ্জসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ একেবারেই নেই। গ্যাস সংকটের কারণে বিস্তীর্ণ এলাকার বাসাবাড়িতে চুলা জ্বলছে না। তাই অনেকে হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন। এ ছাড়া নগরীর বেশিরভাগ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নেই। যেসব স্টেশনে গ্যাস আছে সেখানে গ্যাসের জন্য লম্বা গাড়ির লাইন চোখে পড়েছে। গ্যাসের জন্য লাইনে দাঁড়ানো এসব গাড়ির চালকের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
চট্টগ্রাম কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। কিন্তু দৈনিক সরবরাহ করা হয় মাত্র ২৩০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ অবস্থায় অন্যান্য দিনের তুলনায় রোববার-সোমবার চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ করা হয় ১৩০-১৫০ ঘনফুট। এ কারণে গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার খন্দকার মতিউর রহমান জানান, ‘বিবিয়ানা থেকে গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট সৃষ্টি হয়েছে।’
অন্যদিকে নগরীতে গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানির চাহিদা। কিন্তু নগরবাসীর এ চাহিদা মেটাতে অক্ষম চট্টগ্রাম ওয়াসা। চট্টগ্রাম নগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫০ কোটি লিটার। কিন্তু ওয়াসা উৎপাদন করতে পারছে মাত্র ১৭ কোটি লিটার। ফলে নগরবাসীকে গরম এলেই পানির জন্য চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বিশেষ করে নগরীর চকবাজার, বাকলিয়া, কাপাসগোলা, আন্দরকিল্লা, জামাল খান, দামপাড়া, শুলকবহর, আলফালাহ গলি, হালিশহর, আগ্রাবাদ, টিঅ্যান্ডটি কলোনি, আগ্রাবাদ হাজিপাড়া, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, সিঅ্যান্ডবি, কাট্টলী কুতুব বাড়ি, মতিঝর্ণা, কাজীর দেউড়ি, আসকারদীঘি পাড়, সার্সন রোড, চট্টেশ্বরী এলাকা, পাঠানটুলী, ধনিয়ালাপাড়া, নাসিরাবাদ, পাঁচলাইশ এলাকায় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। এসব এলাকায় পানির সংকট দূর করতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ রেশনিং পদ্ধতিতে পানি দিলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। নগরবাসীর দাবি, প্রতিটি এলাকায় একটি করে গভীর নলকূপ বসিয়ে নগরীর পানির সংকট দূর করতে হবে। অথবা ওয়াসার উদ্যোগে ওয়ার্ডভিত্তিক প্লান্ট বসিয়ে নগরীর পানির চাহিদা মেটাতে হবে।
এ ব্যাপারে ওয়াসার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানে আলম ভূইয়া জানান, ওয়াসা যে পরিমাণ পানি উৎপাদন করে তার তিনগুণের বেশি চাহিদা রয়েছে নগরীতে। প্রতি মাসে ১-২টি করে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপ বসানো হয়। এরপরও এ সংকট কাটছে না। গরম এলে পানির চাহিদা আরো বেড়ে যায়। এ সংকট কাটাতে কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হয়েছে।  তবে এ ব্যাপারে আরো এক বছর ধৈর্য ধরতে হবে।