চাঁদের দেশে পাড়ি দিল চন্দ্রযান-২
প্রতীক্ষা শেষ। চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা করল চন্দ্রযান-২। দৈত্যাকার রকেটটি অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে সোমবার দুপুর ২.৪৩ মিনিটে আকাশে উড়ল। এক সপ্তাহ আগেই ছাড়ার কথা ছিল এই যানটির। ঠিক ৫৬ মিনিট আগে যাত্রা স্থগিত করা হয়। কিন্তু এবার সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হল। ইসরোর কন্ট্রোল রুম থেকে দেখা গেল রকেটটি ক্রমে গতি বাড়িয়ে উড়ে চলেছে আকাশপথে। শক্তিশালী ৬৪০ টনের ‘বাহুবলী’ রকেট দ্রুত মহাকাশে পৌঁছবে। জিএসএলভি মার্ক ৩ ইসরোর সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী রকেট। ৪৪ মিটার লম্বা এই রকেটটি একটি ১৫ তলার বাড়ির সমান উঁচু। রবিবার ৬.৪৩ মিনিট থেকে ২০ ঘণ্টার কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে যায়। ১০০০ কোটি টাকার মিশন এই চন্দ্রযান-২।
উৎক্ষেপণের মিনিটখানেকের মধ্যেই রকেট চন্দ্রযান-২-কে পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছে দেয়। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে কন্ট্রোল রুম। মিশনের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বিজ্ঞানীরা একে অপরকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন।
ইসরোর চেয়ারম্যান কে সিভান বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত খুশি এটা ঘোষণা করতে পেরে যে, জিএসএলভি মার্ক-৩ কক্ষপথে চন্দ্রযান-২-কে পৌঁছে দিয়েছে। ভারতের এক ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু হল। আমরা একটা গুরুতর যান্ত্রিক ত্রুটি সারাতে পেরেছি। যার ফলে সাফল্যের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন ঘটাল ইসরো।” একথা যখন বলছিলেন তিনি, তখন তাঁকে ঘিরে রেখেছিলেন আপ্লুত বিজ্ঞানীরা।
এই মিশন সফল হলে আমেরিকা, রাশিয়া ও চিনের পরে চাঁদে সফল অবতরণের ক্ষেত্রে ভারত চতুর্থ দেশ হবে। রকেটটি মহাকাশে পাড়ি দিল একটি অরবিটার, ‘বিক্রম’ নামের একটি ল্যান্ডার ও ‘প্রজ্ঞান’ নামের মুন রোভারকে সঙ্গে নিয়ে।
গত সোমবার উৎক্ষেপণের সময়ের ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আগে যাত্রা স্থগিত হয় চন্দ্রযানের। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এক বর্ষীয়ান ইসরো আধিকারিক তখন NDTV-কে জানিয়েছিলেন, ‘‘সমস্যাটি গুরুতর ছিল। কিন্তু সহজেই সমাধান করা গিয়েছে। সৌভাগ্যবশত আমরা ত্রুটিটা ধরতে পেরেছিলাম। সতর্কতা, প্রার্থনা এবং একশো কোটি ভারতবাসীর শুভকামনায় মিশনটি ব্যর্থ হতে হতে বেঁচেছে।”
ইসরোর চেয়ারম্যান কে সিভান চন্দ্রযান-২কে উল্লেখ করেছেন ‘‘ইসরোর সবচেয়ে জটিল মিশন” বলে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার থেকে ২০ ভাগ কম খরচে ইসরো চন্দ্রাভিযানের পরিকল্পনা করেছে। ১০০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে এই মিশন বাবদ, যা সাম্প্রতিক হলিউড ব্লকবাস্টার (অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ড গেম) তৈরির থেকেও কম!
চন্দ্রযান-২ সম্পর্কে কে সিভান জানাচ্ছেন, চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পরে চাঁদের মাটিতে প্রাকৃতিক সম্পদের সন্ধান করবে সেটি। খুঁজে দেখবে চাঁদে জলের অস্তিত্ব। এবং অবশ্যই ‘হাই রেজলিউশন’ ছবি তুলে আনবে।