চাহিদা কমায় প্রাকৃতিক গ্যাসের দামে পতন

বিশ্ববাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কমতে শুরু করেছে। গত ছয় মাসে এ গ্যাসের দামে ৭৫ শতাংশ পতন হয়েছে। শীতের পর চাহিদা তুলনামূলক কমে যাওয়ায় এবং সুদহারের ক্ষেত্রে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের আগ্রাসী মনোভাবে শিল্প খাতে গ্যাস ব্যবহারে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, যা চাহিদার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। খবর ইকোনমিক টাইমস।

২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে গ্যাসের বাজার ছিল ভীষণ অস্থির। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে সরবরাহ চেইনে সংকট দেখা দেয়। শীর্ষ উৎপাদক যুক্তরাষ্ট্র থেকে রফতানিতে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে ওঠানামা করে।

চলতি বছরের শুরুতেই নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) প্রতি এমএমবিটিইউ গ্যাসের দাম ছিল ৪ ডলার ৪০ সেন্ট। ফেব্রুয়ারিতে দাম কমে ২ ডলারে নেমে আসে। বর্তমানে প্রতি এমএমবিটিইউ ২ ডলার ৫০ সেন্টে বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ববাজারে যে প্রবণতা বিরাজমান, ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারেও তার ছায়াই দেখা যাচ্ছে।

শিল্প খাতগুলোয় জ্বালানির উৎস হিসেবে ব্যাপকহারে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার হয়। ফলে শিল্প খাতের চাহিদার সঙ্গে গ্যাসের দাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেসব শিল্পে কাজের প্রয়োজনে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে শীতল বা গরম তাপ উৎপন্ন করতে বিপুল পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার হয়। সম্প্রতি মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ অত্যন্ত আগ্রাসীভাবে সুদহার বাড়ানোয় বিশ্ব অর্থনীতি এক ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে। যার জের হিসেবে শিল্প খাতের কর্মকাণ্ড কমেছে এবং স্বাভাবিকভাবেই জ্বালানির চাহিদা অনেক কমিয়ে দিয়েছে।

শীতপ্রধান দেশগুলোয় সাধারণত শীতে গ্যাসের ব্যাপক চাহিদা থাকে। এরই মধ্যে শীর্ষ গ্যাস ব্যবহারকারী সেসব দেশে শীত মৌসুম শেষ হয়েছে। ফলে চাহিদা কমেছে। গৃহস্থালির কাজে গ্যাসের যে চাহিদা থাকে, তা এ সময় অর্থাৎ শীত ও গ্রীষ্মের মাঝামাঝিতে সবসময়ই কম থাকে। এছাড়া বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহার কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদক কোম্পানিগুলোরও প্রাকৃতিক গ্যাস নির্ভরতা কিছুটা কমেছে।

গত বছর ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরু হলে গ্যাসের দামের ইউরোপীয় বেঞ্চমার্ক ডাচ টিএফটি বেড়ে যায়, যা এখন এক বছরের সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সংরক্ষণের পরিমাণ বাড়িয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সফলভাবে রুশ গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে পেরেছে। আবার সবশেষ মৌসুমে তুলনামূলক কম শীত পড়েছিল। যে কারণে অন্য বছরের তুলনায় গ্যাসের চাহিদাও ছিল কম। যুদ্ধ ও রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি বন্ধের কারণে গত আগস্টে ডাচ টিএফটিতে দাম বেড়েছিল চার গুণ।

ইউরোপের বেশির ভাগসহ বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশে গ্যাসের প্রধান রফতানিকারক ছিল রাশিয়া। যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে সরবরাহ কমিয়ে দেয় রাশিয়া। ফলে অন্যান্য উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহে মরিয়া হয়ে ওঠে দেশগুলো। এ পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্বজুড়ে গ্যাসের বেশ সংকট দেখা দেয়, যা গোটা বিশ্বের ভোক্তা, ব্যবসা ও অর্থনীতির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রও সংকটমুক্ত ছিল না।

এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আগের বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করেছে। শীতকালীন চাহিদার পাশাপাশি আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতেও গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে যায়।