ছয় বছরে ছয় হাজার মেগাওয়াট
গত ছয় বছরে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হয়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচ হাজার ৭০৬ মেগাওয়াট বেড়েছে। ২০০৯ সালের আগে দেশের ২৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। ২০১৪ সালের জুনে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৪টিতে। এই কেন্দ্রর উৎপাদন ক্ষমতা হয়েছে ১০ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট। এই ধারাবাহিকতায় আগামী পাঁচ বছরে আরও প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে জ্বালানির ব্যবহার ঠিকভাবে করা গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আরও বাড়ানো যেত।
গত পাঁচ বছরে দেশে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৪ শতাংশ হয়েছে। ২০১৯ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ হওয়ার আশা করা হচ্ছে। গত ছয় বছরে মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহার ২২০ ইউনিট থেকে ৩৪৮ ইউনিটে পৌঁছেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেছেন, গত পাঁচ বছরে বিদ্যুৎ খাতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। আরও ছয় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার আসবে বিদেশি সহযোগিতার মাধ্যমে এবং বাকি ১০ বিলিয়ন ডলার আসবে অংশীদার ভিত্তিক, সরকারি তহবিল ও বিভিন্ন কোম্পানির সহযোগীতায়।
নতুন করে বিদ্যুৎখাতের মহাপরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমদানি করা জ্বালানির উপর নির্ভর করে এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ি ২০৪০ সালে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ৬৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। প্রতিবছর গড়ে আট ভাগ করে চাহিদা বাড়বে।
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ি, ২০২১ সালে দেশের মোট বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াবে ১৮ হাজার ৮৩৮ মেগাওয়াট। এই সময়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাত শতাংশ। এই হিসেবে ২০১৫ সালে দুই হাজার ৯৩৪ মেগাওয়াট, ২০১৬ সালে দুই হাজার ১৪৮ মেগাওয়াট, ২০১৭ সালে এক হাজার ২৭১ মেগাওয়াট, ২০১৮ সালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, ২০১৯ সালে দুই হাজার ৮৭ মেগাওয়াট, ২০২০ সালে দুই হাজার মেগাওয়াট এবং ২০২১ সালে তিন হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি খাতে দশ হাজার ২৪৬ মেগাওয়াট এবং বেসরকারি খাতে সাত হাজার ৬৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী আট বছরে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে পাঁচ হাজার ১৮৬ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ও দেড় কোটি টন জ্বালানী তেল প্রয়োজন হবে।
বিশেèষকরা মনে করছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থান করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। ২৪ হাজার মেগাওয়াটের লক্ষ অর্জনে নেয়া পরিকল্পনায় দেশীয় কয়লা ব্যবহারের তেমন উদ্যোগ নেই। কেবল বড়পুকুরিয়া ২৭৫ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুত কেন্দ্রে দেশীয় কয়লা ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে ছয় হাজার ৯৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে আমদানি করা কয়লার উপর নির্ভর করা হচ্ছে।
১০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কেন্দ্র স্থাপন হলেও তা পুরোপুরি উৎপাদন করা যায়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশীয় জ্বালানির নতুনভাবে ব্যবহার শুরু করা গেলে এই পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেত বলে সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছেন। যথেষ্ঠ জ্বালানি থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার করা যায়নি। ফলে বড় বা স্থায়ী কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়নি গত কয়েক বছর। কয়েকটি স্থানে গ্যাস ও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে কোন জ্বালানির অভাব ছিল না। কিন্তু তা হয়নি। কোন কোন স্থানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কোন স্থানে উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
বিবিয়ানা, টেংরাটিলা, সেমুতাং ও ভোলায় গ্যাস আছে। বড়পুকুরিয়ায় আছে কয়লা। যা দিয়ে অনেক আগে থেকেই কমপক্ষে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব ছিল। কিন্তু তা হয়নি। ফলে নতুন করে ভাড়ায় আনা কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের দাম ঘনঘন বাড়াতে হচ্ছে।