জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় স্থানীয় জ্ঞানের সঙ্গে বিজ্ঞানের সমন্বয় করতে হবে

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিজ্ঞানসম্মত বৈশ্বিক জ্ঞান ও স্থানীয় জ্ঞানের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিপন্ন দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মাথায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়নের সেতুবন্ধন’ শীর্ষক এ আয়োজনে রোববার দুটি গোলটেবিল বৈঠকে দেশের শীর্ষ জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেন।
আগামী ডিসেম্বরে ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন সিওপি-২১-এর প্রস্তুতি হিসেবে এ আয়োজনটি করে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা এবং ঢাকাস্থ ফরাসি দূতাবাস। ২৩ মে পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আলোকচিত্রসহ নানা প্রদর্শনী থাকছে এ আয়োজনে। পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত সোফি ওবের ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে উন্নয়নের সেতুবন্ধন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় স্থানীয় জ্ঞান’ শীর্ষক দুটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনকে আমলে নেওয়ার আহ্বান জানান।
পল্লী-কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, অভিন্ন নদীগুলোর পানি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়টি প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে অন্যতম আলোচ্য বিষয় হবে। বাংলাদেশের জ্বালানি, কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশ রক্ষা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বৈঠকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমেরিটাস আইনুন নিশাত সাম্প্রতিক সময়ে দেশের উপকূল থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ সমুদ্রপথে বিদেশ পাড়ি দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘দেশে এখন খাদ্যসংকট নেই। তার পরও কেন উপকূল দিয়ে এত মানুষ ঝুঁকি নিয়ে থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের খুঁজতে হবে।’ দেশের অন্যান্য স্থানে জনসংখ্যা বাড়ছে আর খুলনায় কেন কমছে—সেই প্রশ্ন তুলে আইনুন নিশাত বলেন, উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে টিকতে না পেরে মানুষ উপকূল ছাড়ছে।
সাংবাদিক কামরুল ইসলাম চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রথম বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতিক রহমান এবং জলবায়ুবিশেষজ্ঞ আহসান উদ্দিন আহমেদ।
সাংবাদিক আবু বকর সিদ্দিকের সঞ্চালনায় ‘বৈশ্বিক সমস্যা, স্থানিক সমাধান’ শীর্ষক দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক সলিমুল হক, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা পরিচালক মো. আনসার আলী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম।
২৩ মে পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের ৬০টি সমাধান ও জলবায়ু পরিবর্তনে স্থানিক প্রতিক্রিয়া শীর্ষক দুটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং মানবকুল বনাম জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক চলচিত্র প্রদর্শনী চলবে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে।