জলবায়ুর প্রভাবে বদলে যেতে পারে চলতি বছরের আবহাওয়া

২০১৭ সালটা হতে পারে দুর্যোগপূর্ণ। অতি বৃষ্টি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানতে পারে দেশে। গত গ্রীষ্মে অস্বাভাবিক গরম ছিল দেশে। বর্ষা ও শরৎকালেও ভ্যাপসা গরম ছিল। শীতের মৌসুমটাও ছিল অস্বাভাবিক। শীত বলতে গেলে ছিলই না। খুব বেশি হলেও দুই সপ্তাহের মতো শীতের আবহাওয়া ছিল দেশে।

আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থাগুলো বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গরমে বেশি অনুভূত হয়েছে। তবে চলতি মাসে গড় তাপমাত্রা এখন পর্যন্ত গত বছরের চেয়ে কিছুটা কম। তার আগের ছয় মাসের তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে এক থেকে কখনো আড়াই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ফলে চলতি বছর বাংলাদেশসহ অনেক দেশের আবহাওয়াই দুর্যোগপূর্ণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এমনই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আজ পালন করা হবে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস। ‘দুর্যোগের প্রস্তুতি সারাক্ষণ, আনবে টেকসই উন্নয়ন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালন করা হবে। আজ শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দিবসটি পালনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এ উপলক্ষে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দুর্যোগ মোকাবিলা যন্ত্রপাতির সাত দিনব্যাপী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
জানা যায়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ু তিনটি ধাপের মাধ্যমে একটি চক্র অতিক্রম করে। এই চক্রকে বলা হয় এনসো চক্র। এনসো চক্রের তিনটি ধাপ: এল নিনো, লা নিনা আর এ দুটি যখন প্রবল থাকে না, তখন তাকে বলা হয় এনসো নিউট্রাল। এল নিনো হলো শুষ্ক মৌসুম, এ সময় গরম বেশি পড়ে, বৃষ্টি কম হয়। আর লা নিনার সময় বেশি বৃষ্টি আর বেশি বন্যা দেখা যায়। তাপমাত্রাও কমে যায়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এতদিন এল নিনোর প্রভাবে গরম বেশি পড়েছিল। এখন আবার কমতে শুরু এল নিনোর প্রভাব। অন্যদিকে বাড়তে শুরু করেছে লা নিনার প্রভাব। ফলে বৈশ্বিক আবহাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের আবহাওয়াও।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রা প্রশমিত হয়ে এসেছে। এ থেকে আভাস মিলছে এল নিনোর অবসান ঘটেছে। তবে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লা নিনা অর্থাৎ এল নিনোর সম্পূর্ণ বিপরীত স্বভাবের আবহাওয়ার ধারা গড়ে ওঠার ৭৫ ভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হলে এবারের গ্রীষ্মে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, সাইক্লোন দেখা দিতে পারে।
দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্য এরই মধ্যে সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে ও বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সব উন্নয়ন কর্মসূচিতে দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর কার্যক্রম সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাহসী জনগণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সফলভাবে মোকাবিলা করে টিকে আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে হয়ত প্রতিহত করা যাবে না। তবে প্রস্তুতি থাকলে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। এ কারণে দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে দুর্যোগের নতুন ঝুঁকি প্রতিরোধ ও বিদ্যমান ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন সকলের সচেতনতা ও সমন্বিত প্রস্তুতি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রবণ দেশ। প্রাচীনকাল থেকেই এ দেশ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে আসছে। তাই দুর্যোগের হাত থেকে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে দুর্যোগ ঝুঁকি প্রতিরোধে তাদেরকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশব্যাপী দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে ১৯৭২ সালে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) গঠন করেছিলেন। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে প্রাণিসম্পদ রক্ষায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে তৈরি করেছিলেন ‘মুজিব কিল্লা’।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বাংলাদেশে মার্চ মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ হয়ে থাকে। এরই মধ্যে দেশে ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী ও টর্নেডো শুরু হয়ে গেছে এবং ঘটবে বজপাত ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও। এসব ক্ষেত্রে প্রস্তুতি থাকলে দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সচিব শাহ্ কামাল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দিবসটি পালন উপলক্ষে দেশব্যাপী আলোচনা সভা, পোস্টার স্থাপন, লিফলেট বিতরণ, ক্রোড়পত্র প্রকাশ, টকশো, সড়ক দ্বীপ সাজ-সজ্জা, র‌্যালি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড মহড়াসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।