জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় উন্নত দেশের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সোচ্চার হন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই। অথচ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোই এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বিশ্ববাসীকে আরো সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০১৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারি।
এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘হতে হবে সোচ্চার, সাগরের উচ্চতা বাড়াবো না আর’।
নদী দূষণ রোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুড়িগঙ্গার অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এই নদীটিকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকাকে ঘিরে থাকা পাঁচটি নদীর নাব্য বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা। ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অব ক্লাইমেট চেঞ্জের প্রতিবেদন উল্লেখ করে তিনি বলেন, একদিকে সাগরের পানির স্ফীতি ঘটছে, অন্যদিকে গত বিশ বছরে মেরুঅঞ্চলসহ বিভিন্ন হিমবাহের বরফ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হারে গলছে। এর ফলে ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রসহ বিশ্বের বহু দেশের ঊপকূলীয় নিম্নাঞ্চল সমুদ্র গর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন রেজিলিয়েন্স তহবিল (বিসিসিআরএফ) প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সাতটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে এ পর্যন্ত ১৮৯ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে।
হাজারীবাগের ট্যানারি অচিরেই সাভারে স্থানান্তর করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইটিপি কার্যক্রম অনলাইনে মনিটর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৮১২টি শিল্প কারখানায় ইটিপি স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে সব কল-কারখানাগুলোয় ইটিপি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকরা সময়মতো তাদের কারখানা স্থানান্তর করবেন। ব্যর্থ হলে কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন বন্ধের ব্যবস্থা করা, ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য উত্পাদন, আমদানি, মজুদ ও পরিবহনে আইনের প্রয়োগ জোরদার করতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে বলে তিনি জানান।
চলতি বছর ব্যক্তি পর্যায়ে পরিবেশ পদক পেয়েছেন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এ কে এম হানিফ, যিনি হানিফ সংকেত নামে পরিচিত। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ইত্যাদির নির্মাতার পাশাপাশি একই ক্যাটাগরিতে এবার পরিবেশ পদক পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. খবির উদ্দিন। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে পরিবেশ পদক ২০১৪ পেয়েছে ঢাকার রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন (আরএসএফ)। এছাড়া বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড অফ ওয়াল্ড লাইফ কনজারভেশন ২০১৪ পেয়েছেন মো. মোস্তফা ফিরোজ, মো. হান্নান খান ও মো. জুয়েল রানা। নটরডেম কলেজের নেচার স্টাডি ক্লাবও এবার এ পুরস্কার পেয়েছে। বৃক্ষরোপনে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৩ পেয়েছেন তিন ক্যাটাগরিতে ৩০ জন।
অনুষ্ঠানশেষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে একটি বনজ, একটি ফলজ ও একটি ভেষজ গাছের চারা রোপণ করেন। পরে তিনি বৃক্ষ মেলা পরিদর্শন করেন।