জলবায়ু পরিবর্তনে ৯ ভাগ প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে: এডিবি

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নয় শতাংশ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দক্ষিণ এশিয়ার ‘জলবায়ু ও অর্থনীতি বিষয়ক’ সর্বশেষ প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বর্তমান বৈশ্বিক আচরণ পরিবর্তন না হলে ২০৫০ সাল পর‌্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপির দুই শতাংশ হারে ক্ষতি হবে। আর চলতি শতাব্দী শেষে এই ক্ষতির পরিমাণ হবে জিডিপির ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ।”

তবে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় নেয়া বৈশ্বিক উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন হলে শতাব্দী শেষে এই ক্ষতি কমে দুই শতাংশে নেমে আসবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে যে ঘাটতি হবে তা পূরণ করতে ২০৩০ সালে ৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার এবং ২০৫০ সাল নাগাদ ৩৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার খরচ করতে হবে।

বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কি আর্থিক প্রভাব পড়তে পারে সেবিষয়ে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, ২০৫০ সাল পর‌্যন্ত বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সামগ্রিক অর্থনীতি দেশগুলোর মোট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে পেছনে পড়বে। আর একুশ শতক শেষে এই ক্ষতির পরিমাণ হবে দেশগুলোর মোট জিডিপির ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে শ্রম শক্তির অর্ধেক কৃষি কাজে নিয়োজিত। তারা প্রবল বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা খরায় ক্ষতির মুখে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একইসঙ্গে চাল, গম ও আলুর মত ফসল উৎপাদন কমে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

বাংলাদেশের ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় এলাকা রয়েছে। এসব এলাকায় ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে এসব জনগণ উচ্ছেদের পাশাপাশি উপকুলীয় এলাকার সম্পদ নষ্ট হবে। উপকূলীয় এলাকার মধ্যে খুলনা অঞ্চল সর্ববৃহৎ। এই এলাকার সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের এই অভিঘাত মোকাবেলার জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় এখন থেকে ২১০০ সাল পর‌্যন্ত প্রতিবছর কমপক্ষে ৭৩ বিলিয়ন ডলার বা এই অঞ্চলের মোট জিডিপির দশমিক ৮৬ শতাংশ ব্যয় করতে হতে পারে।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে দুপুরে সোনারগাঁও হোটেলের সংবাদ সম্মেলনে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বিন্দু এন লোহানী ও মুখ্য জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ মাহফুজ উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন ও এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজুহিকো হিগুচি।

বিন্দু এন লোহানী বলেন, এটি একটি ধারণাপত্র। দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ুর পরিবর্তনের কী প্রভাব পড়তে পারে তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছে এডিবি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দারিদ্র্য বিমোচন কার‌্যক্রমের অর্জনও ঝুঁকিতে পড়েছে।

“আমরা চাই এটি প্রতিহত করে এই অঞ্চলের দেশগুলো এগিয়ে যাবে।”

মাহফুজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “জলবায়ুর পরিবর্তনের যে অভিঘাত তা বাংলাদেশের একার পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

“ইতিমধ্যে অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি বা খরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। এর প্রতিরোধ করা না গেলে যে অর্জন পাঁচ বছরে সম্ভব তা অর্জন করতে সাত বছর লাগবে। এজন্য এখনই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে।”

তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক দুয়োগের কারণে ২০০৭ সালে বাংলাদেশের জিডিপির দশমিক ৬০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে।”