জার্মানিই সেরা
আর্জেন্টিনা-জার্মানির খেলা যখন নির্ধারিত সময়ের কোটা পার হয়, তখন খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আর অতিরিক্ত সময়ের ১১৩ মিনিটে দুই বদলি খেলোয়াড় আন্দ্রে শুরলে এবং মারিও গোটশের দৃঢ়তায় অসাধারণ এক গোলে চতুর্থবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় জার্মানি। শুরলের ক্রস থেকে বুক দিয়ে বল ঠেকিয়ে তা আর্জেন্টাইন গোলরক্ষকে ধোঁকা দিয়ে জোরাল শটে বল জালে জড়ান রেকর্ডম্যান মিরোসøাভ ক্লোসার পরিবর্তে মাঠে নামা গোটশে। এ সময় আনন্দে নেচে উঠে ব্রাজিলের ঐতিহাসিক রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে উপস্থিত জার্মান সমর্থকরা। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ফিলিম লাম বাহিনী আবেগে আপ্লুত হয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে আনন্দাশ্রু বর্ষণ করেন। কান্না শুধু লাম, মুলার, ক্লোসাদের চোখেই ছিল না, প্রতিপক্ষ মেসি বাহিনীও শিরোপা জয়ের এত কাছে গিয়ে তা হাতছাড়া হওয়ার বেদনায় অশ্রুসিক্ত হন। মেসি, রোহো, হিগুইয়েন, মাচেরানোদের সঙ্গে কেঁদেছেন গত ক’দিন ধরে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে ব্রাজিলে ঘর-বাড়ি বানিয়ে ফেলা আর্জেন্টাইন ফুটবলপ্রেমী সমর্থকরা। ২৪ বছর পর ফাইনালে উঠে শিরোপা জয় করতে না পারায় আক্ষেপ থেকেই এ কান্না আর্জেন্টিনার। দুই মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয় ইউরোপের। লাতিন আমেরিকার নান্দনিক ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আমেরিকা মহাদেশ থেকে কাপ ছিনিয়ে নিল জোয়াকিম লোর শিষ্যরা। তবে তা জয় করতে হিমালয়সম এক বাধা পেরুতে হয়েছে তাদের। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের এ ম্যাচের ভাগ্য পেন্ডুলামের মতো দোলেছে। কখনো ম্যাচের ভাগ্য জার্মানির দিকে, আবার কখনো তা হেলেছে আলভিসেস্তেরাদের দিকে।
খেলার শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল ন্যুয়ারকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন হিগুয়েইন। এ সুযোগ নষ্ট করার খেসারত দিতে হয় আর্জেন্টিনা দলকে এবং হিগুইয়েনকেও। কারণ ম্যাচে শেষ অবদি মাঠে থাকতে পারেননি তিনি। তার বদলি হিসেবে মাঠে নামানো হয় প্যালাসিওতে। গোলের সুযোগ সমভাবে নষ্ট করে জার্মানিও। মুলার, ক্লোসারা অনেকবার গোলবারের শট নিলেও সার্জিও রোমেরোর অসাধারণ দৃঢ়তায় সে যাত্রায় রক্ষা পায় আকাশি-নীল জার্সিধারীরা।
ফাইনালের সব রকমের উত্তাপ ছড়ানো এ ম্যাচে উত্তেজনা, উদ্দীপনা, আক্ষেপ, আফসোস সব কিছুর মিশেলই ছিল। তবে গোলের খেলা ফুটবলে গোলের বন্যা বইয়ে যায়নি। মাত্র ১-০ ব্যবধানে ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়েছে।
২০১০ সালের বিশ্বকাপের মতো পরিচ্ছন্ন এক ফাইনালই উপভোগ করেছে বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী। ম্যাচে লালকার্ডের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে দু’দলই দুটি করে হলুদকার্ডের শাস্তি পেয়েছে। তিনবারের চেষ্টায় অবশেষে সাফল্যের মুখ দেখেছেন জার্মান কোচ জোয়াকিম লো। ২০০৬ সালে সহকারী কোচ হিসেবে দলকে সেমিফাইনালে নিয়ে যাওয়া, ঠিক পরের আসরে পূর্ণ কোচ হিসেবে আবারো সেমিফাইনালে গিয়ে থামে জার্মানির ইনিংস। অবশেষে ভাগ্যদেবী জোয়াকিমের মুখপানে তাকান। বর দেন জার্মানিকে। ২৪ বছর পর শিরোপা জয়ের খরাও কাটায় আসরের শ্রেষ্ঠ দলটি। ফাইনালে দারুণ কৌশল মার খায় সাবেলার। জার্মানির বিপক্ষে ৪-৩-৩ পদ্ধতিতে দল মাঠে নামান তিনি। কিন্তু জোয়াকিমের ৪-২-৩-১ পদ্ধতিই শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসিতে মাঠ ছাড়ে।
হেরে গেলেও সাবেলা একটা সাদামাটা দলকে ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে আসার দারুণ কৃতিত্ব দেখান। বিশ্বকাপ শুরুর আগে কেউ ভাবেনি এ পর্যন্ত আসবে আর্জেন্টিনা। কারণ আলভিসেলেস্তারা টানা কয়েকটি আসরে কোয়ার্টার ফাইনালের বেশি যেতে পারেনি। এর মধ্যে ২০০৬ এবং ২০১০ সালে জার্মানির কাছে কোয়ার্টারে হেরেই দ্রুত বাড়ির পথ ধরে তারা।
ফাইনাল ট্রফি জয় করতে না পারলেও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান ম্যারাডোনার উত্তরসূরি মেসি। মুলারকে পেছনে ফেলে টুর্নামেন্টে সর্বাধিক ছয় গোল করে গোল্ডেন বুট জিতে নেন কলম্বিয়ার হ্যামেশ রদ্রিগেজ। আর আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরোকে হারিয়ে গোল্ডেনগ্লভস জিতে নেন জার্মানি ন্যুয়ার। – See more at: http://www.manobkantha.com/2014/07/14/182039.html#sthash.rvu3mZQz.dpuf