জীবাশ্ম নির্ভর জ্বালানি মহাপরিকল্পনা সংশোধনের দাবি তরুণ জলবায়ু কর্মীদের

ঢাকা, ১১ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস):

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অনুষ্ঠিত হলো বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট।

ফ্রাইডেস ফর ফিউচার এর আহ্বানে শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই কর্মসূচির আয়োজন করে ইয়ুথনেট গ্লোবাল।

সমাবেশে অংশ নেয় দুই শতাধিক তরুণ-তরুণী, যাদের রঙিন ব্যানার, পোস্টার ও উচ্চকণ্ঠের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে প্রেস ক্লাব এলাকা।

জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে জলবায়ু কর্মীরা বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে হলে জ্বালানি নীতিতে নবায়নযোগ্য উৎসগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সমন্বিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে কমবে ব্যয়বহুল ও দূষিত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। তাই এই পরিকল্পনা দ্রুত সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন জলবায়ু কর্মীরা।

আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত দেশগুলোর দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশকে সহায়তা নিশ্চিতের আহ্বানও জানান তারা।

সমাবেশে ইয়ুথনেট গ্লোবাল- এর নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ু সংকটকে বিবেচনায় রেখে আমাদের শক্তি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। আইইপিএমপি’তে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সুবিধা নিশ্চিত করার বদলে দরকার একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ ও স্থানীয় বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটানো পরিকল্পনা। এখন সময় জনগণকে ক্ষমতায়িত করা, নবায়নযোগ্য শক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং ভ্রান্ত সমাধানের যুগের অবসান ঘটানোর।’

সোহানুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ জীবাশ্ম জ্বালানির মুনাফার জন্য বিক্রি করা চলবে না। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারই একমাত্র টেকসই পথ।’

জলবায়ু কর্মী আরুবা ফারুক বলেন, ‘জলবায়ু সংকটে দায়ী নয় বাংলাদেশ, অথচ ক্ষতির শিকার আমরা। তাই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে উন্নত দেশগুলোকে।’

উইমেন’স ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড অ্যাডাপটেশন অ্যালায়েন্স-এর কোঅর্ডিনেটর আনিকা করিম, আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তারসহ বক্তব্য রাখেন আরও অনেকে।

তরুণদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আইইপিএমপি বিগত সরকারের একটি ভুল পরিকল্পনার অংশ, যা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আর্থিক সংকটকে উপেক্ষা করেছে। এ পরিকল্পনায় বিদ্যুতের চাহিদা অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষিতভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যার সুযোগ নিয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো।’

সিপিডি গবেষণা পরিচালক আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এখনই সময় আইইপিএমপি পুনঃমূল্যায়ন ও সংশোধনের। আমরা চাই নতুন পরিকল্পনা হবে দেশীয় সমাধানভিত্তিক, দেশীয় অর্থায়নে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে প্রণীত।’

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট পালন করে আসছেন সারা বিশ্বের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। মূলত এই ধর্মঘটের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে বিশ্বনেতাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

বৈশ্বিক পর্যায়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সংগঠন ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ এ ধর্মঘটের মূল উদ্যোক্তা। ফ্রাইডেস ফর ফিউচারের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশে প্রতিবছর জলবায়ু ধর্মঘটের আয়োজন করে আসছে তরুণদের সংগঠন ইয়ুথনেট গ্লোবাল।