জ্বালানি তেল: লাভ তবুও ভর্তূকি

জ্বালানি তেল আমদানিতে লাভ হচ্ছে। তবু ভবিষ্যৎ অনিশ্চিয়তার কথা ভেবে বিপিসি’র জন্য আসন্ন বাজেটে ভর্তুকি রাখা হচ্ছে। তবে গত অর্থ বছরের চেয়ে এই ভর্তুকির পরিমান অনেক কম। চলতি অর্থ বছর বিপিসির জন্য ৮০০ কোটি টাকা ভর্তুকি রাখা হতে পারে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত অর্থ বছরের মত এবারও জ্বালানি তেল আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হতে পারে। শুল্ক বাড়ানো হলে আমদানি খরচও বাড়বে। এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও খরচ কমেছে। তবুও  গতবারের চেয়ে বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি।
অর্থমন্ত্রনালয় সূত্র জানায়, ভবিষ্যত নিরাপত্তার জন্য এই ভর্তুকি রাখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যেহেতু জ্বালানি তেলের দাম স্থির না সে জন্য ভর্তুকি রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম অল্প অল্প বাড়তে শুরু করেছে। যদিও এই দাম খুব বেশি বাড়বে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে এবার জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর ফলে মোট বাজেটে ভর্তকিও কমবে।
সূত্র জানায়, বাজেটে গতবারের চেয়ে এবার মোট ভর্তুকি প্রায় সাড়ে পাঁচ ভাগ কমে যেতে পারে।
প্রতিবছরের মত এবারও প্রায় সকল খাতেই ভর্তুকি রাখা হবে। অন্য সামাজিক যেসব খাতে প্রতিবছর ভর্তুকি রাখা হত সেটা আগের মতই থাকবে। খাদ্য আমদানিতে এক হাজার ৮০০ কোটি, সরকারি মালিকানাধীন পাট কলের জন্য এক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি রাখা হবে। কৃষিখাতে সার আমদানিসহ অন্যান্যখাতে যথারীতি ভর্তুকি রাখা হবে।
লাভ করলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)’র পুরো ভর্তুকি তুলে দেয়া হচ্ছে না। আসন্ন বাজেটে বিপিসি জন্য ভর্তুকি রাখা হবে। তবে তা অন্যবারের চেয়ে অনেক কম।  এবার জ্বালানি তেল খাতে ৮০০ কোটি টাকা ভর্তুকি রাখা হতে পারে। গতবার ছিল প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমান বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতের জন্য ভর্তুকি রাখা হতে পারে আট হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছর এই ভর্তুকি সাত হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার ফলে আমদানিতে খরচ কমেছে। প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা জ্বালানি তেলে ভর্তুকি রাখা হয়। গত কয়েক বছর এই ভর্তুকির পরিমান অনেক বেশি। প্রতিবছরই বাজেটের মোট ভর্তুকির সিংহ অংশ জ্বালানির জন্য চলে যায়। এবার সেই জ্বালানি তেল কেনার জন্য ভর্তুকি প্রয়োজন হবে না বিবেচনা করা হচ্ছে। এজন্য বাজেটে ভর্তুকির পরিমানও কমছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের সভায় বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। পরে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়ে ছিলেন, অর্থ মন্ত্রনালয় থেকে জানানো হয়েছে, আসন্ন বাজেটে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে আগের মতই ভর্তুকি রাখা হবে।
বিদ্যুৎ খাতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সাত হাজার ২০০ কোটি টাকা লোকসান ধরে ভর্তুকি রাখা হয়েছিল। এবারও আপাতত বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করার কারণে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিদ্যুতে লোকসান হয় ছয় হাজার কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা এবং ২০১১-১২ অর্থ বছরে ছয় হাজার ৩৫০ কোটি লোকসান হয়েছিল।
প্রতিবছর লোকসানের জন্য ভর্তুকি প্রয়োজন হলেও এখন লাভ করছে বিপিসি। কারণ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত বিপিসি তেল বিক্রি করে লাভ করেছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। বর্তমান দাম স্থির থাকলে এই লাভও অব্যাহত থাকবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেও বিপিসির লোকসান হবে এমন পর্যায়ে যাবে না। বর্তমানে যে হারে লাভ করছে সেই হারই অব্যাহত থাকবে।
বিপিসির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা বলেন, অন্যবারের মত এবার জ্বালানি তেলে ভর্তুকি প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম হলেও স্থিতিশীল নয়। দাম উঠা নামা করছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে অকটেন ও পেট্রোলে লিটার প্রতি বিপিসি লাভ করছে ৩৫ টাকা। কোরোসিনে ১৪ টাকা, ডিজেলে ১৫ টাকা, ফার্নেসে ২০ টাকা এবং জেট ফুয়েলে ১৯ টাকা লাভ করছে। এদিকে সম্পতি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর শুনানীতে জানানো হয়, উৎপাদন ও বিক্রিতে প্রতি ইউনিট দামের পার্থক্য এক টাকা ৬৭ পয়সা। এই হারে বছরে প্রায় সাত হাজার ৫৬০ কোটি টাকা বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। তবে জ্বালানি খরচ কমে গেলে এই খরচও কমে যাবে। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারি প্রতিটি কোম্পানি লাভ করছে বলে জানানো হয়েছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোও লাভ করছে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়ানো হয়। পরে আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে কমতে ৪০ ডলার পর্যন্ত আসে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও স্থানীয় বাজারে আর কমানো হয়নি। গত প্রায় এক বছর টানা আন্তজাতিক বাজারে তেলের দাম কম  আবার স্থানীয় বাজারে বেশি। এই অবস্থায় লাভ করছে বিপিসি।