জ্বালানি তেলের দাম এবার কমানো হোক
সম্পাদকীয়:
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। আগে প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি হতো ৬৫ টাকায়। মূল্যবৃদ্ধির পর তা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ লিটারপ্রতি দাম বাড়ানো হয়েছে ১৫ টাকা।
দাম বাড়ানোর ফলে দরিদ্র মানুষের চাপ বেড়েছে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষি খাতের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বেড়েছে পরিবহন ভাড়া।
এখন আবার স্বস্তি ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে।
দুটো কারণকে সামনে এসে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসান। আর প্রতিবেশি দেশ ভারতে দাম বেশি হওয়ায় পাচার হওয়ার শঙ্কা। এখন দুটোই কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে। সাথে প্রতিনিয়ত কমছে ভারতে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেশ কমেছে। লাভ করছে বিপিসি। বন্দরে কর দেয়ার পরও জ্বালানি তেলআমদানি কওে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে লাভ করছে বিপিসি।
গত কয়েক বছর টানা লাভ করছে বিপিসি। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে অল্প কয়েকদিন দাম বাড়ায় স্থানীয় বাজারেও লিটারে ১৫টাকা বাড়িয়েছিল।
গত সাড়ে পাঁচ বছর দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য অপরিবর্তিত ছিল। এই সময় বিপিসি ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় ৩৩ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। গত কয়েকবছর জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি লাগেনি। অতিরিক্ত মূল্যে জ্বালানি তেল বিক্রি করে বিপিসি লাভ করেছে।
গত কয়েকমাস বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করেছে। তাতে প্রায় এক হাজার ১৪৮ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। লাভের তুলনায় এই লোকসান নগণ্য। জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার সবসময়ই অস্থিতিশীল। করোনার কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে কমে গিয়েছিল। এক পর্যায়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ৩৭ মার্কিন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। সেসময় যথেষ্ট লাভ হয়েছে।
খুব তাড়াহুড়ো করেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। কিছুদিন অপেক্ষা করা যেত। কিন্তু তা করা হয়নি। কারণ পূর্বাভাস ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও এক পর্যায়ে তা আবার কমবে।
টিকা দেয়ার কারণে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে বিশ্ব অর্থনৈতিক কার্যক্রম জোরদার হয়। তাতে জ্বালানি তেলের চাহিদা ও দাম বাড়ে। ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৮৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। আর তখনই স্থানীয় বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সময় প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে স্থানীয় বাজারেও কমানো হবে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য কমে স্থিতিশীল হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ১৫ শতাংশ কমেছে।
এখন কথা রাখার সময় এসেছে। জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সময় এসেছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের আর সুযোগ নেই। যদি আবার আন্তর্জাতিক বাজারে আকাশ ছোঁয়া দাম হয়, মোটা অংকের লোকসান শুরু হয় তখন দাম বাড়ানোর সুযোগ যে থাকবে না তা তো নয়। ফলে এখনই দাম কমিয়ে কথা রাখা আর আস্থা অর্জন জরুরি।
করোনার পর ঘুরে দাঁড়াতে থাকা অর্থনৈতিক কার্যাকলাপ সচল বা আরও গতিশীল করতে তেলের দাম কমানো কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কৌশলগত আবশ্যিক এই পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।