জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি, অর্থমন্ত্রীর ইতিবাচক ইঙ্গিত

জ্বালানি তেলের দাম কমানোর জোরালো দাবি উঠেছে ব্যবসায়ী, বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে। দাম কমানোর ইকিবাচক ইঙ্গিতও দিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হওয়ায় এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। রোববার পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৩৭ ডলার, যা দুই বছর আগে ছিল ১২২ ডলার।
মূল্যনীতি চূড়ান্তের পর দাম কমবে জ্বালানি তেলের -অর্থমন্ত্রী
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রোববার বলেছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যনীতি চূড়ান্ত করে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।
সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। তবে কবে নাগাদ দাম কমানো হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
এরআগে, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এমসিসিআই সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বৈঠকে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
স্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদরা এখনই জ্বালানি তেলের দাম কমানোর উপযুক্ত সময় বলে মত দেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি খাতে নির্দিষ্ট ‘মূল্যনীতি’ নেই। চেষ্টা করছি এটি দ্রুত করার। সেটি হলে পর্যালোচনা করে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দাম পুনর্নির্ধারণ করা হবে। তবে আপাতত বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে না। কবে নাগাদ এ সিদ্ধান্ত আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় বলতে পারব না। কেননা, এর সঙ্গে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক জড়িত।
অর্থমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি তেলে যে লোকসান দেয়া হয়েছে, তা সমন্বয় করেছে বিপিসি। এখন দাম কমানোর বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বরে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করার পরিকল্পনা সরকারের আছে। কিন্তু এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন নবনির্বাচিত মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি আক্তার মতিন চৌধুরী, এসকেএফ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিমিন হোসেন, পিকার্ড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম, আইসিই টেকনোলজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবায়েত জামিল, ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, এইচএসবিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফ্রাঙ্কোয়েস ডি মেরিকোর্টসহ অন্যরা।

এদিকে রোববার ব্যবসায়ীদের সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) নেতারা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে দেখা করেও জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি জানান।
তোফায়েল আহমেদ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ঠদের সাথে আলোচনা করবেন বলে ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতিদেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। এটা আমার মন্ত্রণালয়ের বিষয় না হলেও ব্যবসায়ীদের এই দাবি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহলে কথা বলব।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুপারিশ করেছে। তারা বলছে, দেশে জ্বালানি তেলের দাম গড়ে ১০ শতাংশ কমানো হলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে।
রোববার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলা হয়।
সিপিডি বলেছে, জ্বালানি তেলের দাম গড়ে ১০ শতাংশ কমানো হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশমিক তিন শতাংশ বাড়বে। তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়বে দশমিক চার শতাংশ। ভোক্তা চাহিদা বাড়বে দশমিক ছয় শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি কমবে দশমিক দুই শতাংশ। তবে সরকারের সঞ্চয় কমবে দশমিক চার শতাংশ। সংবাদ সম্মেলনে জানােনো হয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) এখন পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার ফলে গত অর্থবছর বিপিসি পাঁচ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এ বছর তেলের দাম অপরিবর্তিত থাকলে ১১ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করবে। এ মুনাফার অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে কি না, তা পরিষ্কার নয়।

cpd
সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, জ্বালানি তেলের দাম না কমানোয় রাজস্ব আদায় কম হওয়ার পরও ‘নিশ্বাস’ ফেলতে পারছে সরকার। এখন উৎপাদক ও ভোক্তাকেও ‘নিশ্বাস’ ফেলতে দিতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শুধু জ্বালানি তেল নয়, গ্যাস-বিদ্যুতের দামও সমন্বয় করতে হবে। তবে এটা কীভাবে ভারসাম্য আনা হবে, সেটা ঠিক করতে হবে। তিনি মনে করেন, এখনই ভালো সময় এ তিন বিষয়ের সমন্বয় করার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুপারিশ করেন।

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ছিল প্রতিব্যারেল ৯৭ ডলার। আর এখন ৩৭ ডলার।