জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার উদ্যোগ
জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশ্ববাজারে অব্যাহত তেলের দাম কমায় এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
জ্বালানি তেল আমদানি করে স্থানীয় বাজারে বেশি দামে বিক্রির ফলে বিপিসির লাভের পরিমান দিন দিন বাড়ছেই। এই অবস্থায় অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা সকল পর্যায় থেকে তেলের দাম কমানোর দাবি তুলেছে।
অর্থ মন্ত্রনালয় ও জ্বালানি বিভাগ তেলের দাম পর্যালোচনা শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেই এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
জ্বালানি তেল বিক্রিতে বিপিসি কী পরিমান লাভ করছে তা জানতে চেয়েছে অর্থ মন্ত্রনালয়। দ্রুত জ্বালানি বিভাগ বিপিসির সার্বিক অবস্থা অর্থ মন্ত্রনালয়কে জানাবে বলে জানা গেছে। জ্বালানি বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রনালয়ে যে চিঠি দেয়া হচ্ছে সেখানে বিপিসির সকল ভর্তূকির অর্থ অনুদান হিসেবে দেখার সুপারিশ করা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে গত কয়েকবছর তেল কিনতে সরকার কোন ভতূকি দেয়নি। ঋণ দিয়েছে। এখন সেই ঋণের অর্থ ফেরত চাইছে অর্থ মন্ত্রনালয়। জ্বালানি বিভাগ থেকে এই ঋণের অর্থ অনুদান হিসেবে দেখার সুপারিশ করা হবে।
সূত্র জানায়, বিপিসি গত ২১ ডিসেম্বর শেষ তেল কিনেছে। সে দিনের দাম অনুযায়ী সকল কর ভ্যাট যোগ করে প্রতি লিটার ডিজেল আমদানিতে খরচ প্রায় ৪০ টাকা। বাজারে এই ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকায়। আমদানি করা তেল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে লিটার প্রতি অকটেনে ৪০ টাকা, পেট্রলে ৩৫ টাকা, ডিজেল ও কেরোসিনে ১৮ টাকা ও ফার্নেস তেলে ১৫ টাকা লাভ হচ্ছে। তবে কর সুবিধা পাওয়ার কারণে বেসরকারিভাবে আমদানি করা জ্বালানি তেলের দাম আরও কম পড়ছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, জ্বালানি তেলের দাম কমার বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। তার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দাম কমানোর আগে প্রধানমন্ত্রীর সাথেও আলোচনা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দাম কমার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতামত নেয়া হবে। তবে সিদ্ধান্ত অর্থমন্ত্রনালয় থেকেই নেয়া হবে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এনার্জি বাংলাকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেবে অর্থমন্ত্রনালয়। অর্থমন্ত্রনালয় থেকে তথ্য উপাত্ত চেয়েছে। সেগুলো দেয়ার উদ্যোগ চলছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরী করা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম কমালে সুবিধাভোগি গোষ্ঠি চিহ্নিত করে পর্যালোচনা করা হবে। সাধারণ মানুষ সুবিধা পাবে কিনা তা দেখা হবে।
এ বিষয়ে জ্বালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী এনার্জি বাংলাকে বলেন, আর্ন্তজাতিক বাজার থেকে বেশি দামে তেল কিনে কম দামে বিক্রি করে আগেই লোকসানে ছিল বিপিসি। সে লোকসানের দায় এখনও কাটেনি। যখন বিপিসি নিয়মিত লোকসান করেছে তখন সরকার কোন ভর্তূকি দেয়নি। ঋণ দিয়েছে। এখন সেই ঋণের অর্থ ফেরত চাইছে অর্থমন্ত্রণালয়। জ্বালানি বিভাগ থেকে এই ঋণের অর্থ অনুদান হিসেবে দেখার সুপারিশ করা হবে বলে তিনি জানান।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছর থেকে জ্বালানি তেল বিক্রিতে বিপিসি লাভ করছে। এই সময় আর্ন্তজাতিক বাজারে তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ৯০ ডলার। সে সময় দেশের বাজারে লিটার প্রতি ডিজেল বিক্রি হয়েছে ৬৮ টাকা। এই অবস্থায় সে বছর বিপিসি লাভ করেছে পাঁচ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। বিশ্ববাজারে ২০১৩-১৪ অর্থবছর তেলের দাম ছিল গড়ে ১২০ ডলার। দেশীয় বাজারে লিটার প্রতি ডিজেল বিক্রি হয়েছে ৬৮ টাকা। আর সে বছর লোকসান হয়েছে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে যখন বিশ্ববাজারে ব্যারেল প্রতি ৮৬ ডলার তখন স্থানীয় বাজারে ৪৪ টাকা লিটার। এতে লোকসান হয়েছে দুই হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থবছর বিশ্ববাজারে ব্যারেল প্রতিদাম ছিল ৭৭ ডলার আর স্থানীয় বাজারে ৩০ টাকা। সে বছর লোকসান হয়েছে তিন হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। লাভ লোকসান মিলে বিপিসির বর্তমানে পুঞ্জিভূত দায় ৪৬ হাজার ৪০৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এরআগে ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। আর ২০০৮ সালে সরকার ক্ষমতায় এসেই তেলের দাম কমিয়েছিল।
বুধবার আর্ন্তজাতিক বাজারে তেলের দর ছিল ব্যারেল প্রতি সাড়ে ২৭ ডলার।