জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রনালয়ে
জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রনালয় সকল বিষয় পর্যালোচনা শেষে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
জ্বালানি বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রনালয়ে পাঠানো প্রস্তাবে জ্বালানি তেলের সামগ্রীক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। একই সাথে কোন জ্বালানির মূল্য কত কমালে বা কত নির্ধারণ করা হলে বিপিসি’র লাভের পরিমান কী হবে তার একটা বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বৃহস্পতিবার জানান, অর্থ মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে সমন্বয় করা হলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কী হবে তা পর্যালোচনা করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রনালয় থেকে যে নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের লাভ সকল জনগণের উপকারে বিনিয়োগ করতে চায়। জ্বালানি তেলের দাম কমালে যদি শুধু মুষ্ঠীমেয় কিছু যানবাহন মালিক সুবিধা পায় তবে সে সুবিধা দেয়া ঠিক হবে না। জ্বালানি তেলের দাম কমালে যানবাহন মালিকরাও ভাড়া কমাবে এমন প্রতিশ্রুতি পেলে অবশ্যই এবিষয়ে জ্বালানি বিভাগ বিশেষ উদ্যোগ নেবে।
সূত্র জানায়, যদি অকটেনে লিটারে পাঁচ টাকা কমানো হয় তবুও লাভ হরে ৩০ টাকা। একইভাবে কোরোসিন ও ডিজেলে লিটার প্রতি পাঁচ টাকা কমালে বর্তমান লাভ কমে হবে প্রায় নয় টাকা। ফার্ণেস তেলে পাঁচ টাকা কমালে লাভ হবে ১৪ টাকা। গত প্রায় দেড় বছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন যে লাভ করেছে তা থেকে এখন পর্যন্ত সাত হাজার কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রনালয়কে ফেরত দিয়েছে।
বিশ্ববাজারে বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমেছে। এজন্য ভবিষ্যতে যে তেল কেনা হবে তাতে লাভের পরিমান আরও বাড়বে। বাংলাদেশ সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে ব্যারেল প্রতি ৪৩ ডলারে তেল কিনে ছিল। বর্তমানে এই তেলের দাম ৩০ ডলারের নিচে।
আমদানি করে প্রতি লিটার অকটেন বিক্রিতে বিপিসির খরচ ৬৩ টাকা ৫১ পয়সা, বিক্রি করছে ৯৯ টাকায়। অর্থাৎ এক লিটার অকটেন বিক্রি করে বিপিসির লাভ হচ্ছে ৩৫ টাকা ৪৯ পয়সা। একইভাবে ৫৪ টাকা ২৩ পয়সার কেরোসিন ৬৮ টাকায় বিক্রি করে মুনাফা করছে ১৩ টাকা ৭৭ পয়সা। ৫৪ টাকা ২৫ পয়সার জেট অয়েল ৭৩ টাকায় বিক্রি করে ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা। ৫৩ টাকা ৩২ পয়সার ডিজেল ৬৮ টাকায় বিক্রি করে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা এবং ৪০ টাকা ৪৩ পয়সার ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকায় বিক্রি করে লিটার প্রতি লাভ হচ্ছে ১৯ টাকা। এ হিসাব গত আগস্টের। এরপর বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও কমেছে।
বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০০৪ সালের পর জ্বালানি তেলের দাম এত নিচে নামেনি। দুই বছর আগে তেলের দাম ছিল ১২২ ডলার। বাংলাদেশে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। এখনও সে দামই আছে। সে সময় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ৯৭ ডলার। আর এখন ৩৭ ডলার। দুই বছরে পর্যায়ক্রমে ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলার দাম কমেছে। এই দাম আরও কমতে পারে। এই অবস্থায় প্রায় দেড় বছর ধরেই জ্বালানি তেলে লাভ হচ্ছে।
গত দেড় বছর লাভ করলেও এরআগে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পর্যায়ক্রমে লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে বিপিসি’র পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার ফলে গত অর্থবছর বিপিসি পাঁচ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা লাভ করেছে। তেলের দাম একই অবস্থানে থাকলে এ বছর ১১ হাজার কোটি টাকা লাভ করবে। তবে এই লাভের টাকায় বিপিসি তার ঋণ শোধ করছে না। অর্থমন্ত্রনালয়ের নির্দেশে সরকারকে সে টাকা দিয়ে দিতে হচ্ছে।