জ্বালানি তেলের রেকর্ড দরপতন
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আবার কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ৩৭ ডলারের আশপাশে ওঠানামা করছে। ১১ বছরের মধ্যে এটাই তেলের সর্বনিম্ন দর। ২০১৫ সালে তেলের দাম ৩৫ শতাংশ হ্রাস পায়। ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ব মন্দার পর তেলের এত বড় দরপতন আর হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসার সম্ভাবনাও খুব কম। শুধু তাই নয়, এ বছর তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ২০ ডলারে নেমে যেতে পারে।
কোন কোন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি
বছরের শেষ নাগাদ তেলের দাম আবার বাড়তে শুরু করবে। প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক পুঁজি বিনিয়োগ সংস্থা গোল্ডম্যান সাচ আভাস দিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৩৮ ডলারের কাছাকাছি থাকবে, যা ২০১৫ সালের অধিকাংশ সময়ের তুলনায় কম।
তবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর বাজার পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ) ধারণা করছে, চলতি বছরের অধিকাংশ সময়েই চাহিদার চেয়ে তেলের সরবরাহ বেশি থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই তেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা বলতে গেলে নেই।
চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি হওয়ায় তেলের আন্তর্জাতিক বাজার চাপের মুখে পড়েছে। নজিরবিহীন সংকটে পড়েছে অপরিশোধিত তেলের বাজার। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, চীনসহ বেশ কিছু দেশের বাজারে তেলের চাহিদা কমে গেলেও বিশ্ববাজারে মার্কেট শেয়ার ধরে রাখতে মরিয়া শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশগুলো। এসব দেশ বিপুল পরিমাণে তেল উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।
তেলের দাম বাড়াতে হলে উৎপাদন কমাতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজি নয় তেল রফতানিকারকদের সংস্থা ওপেক। সৌদির নেতৃত্বাধীন এই সংস্থাটি বরং অতি উৎপাদনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও বেশকিছু দেশের উচ্চমূল্যের তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোকে বাজার থেকে হটানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে ওপেকের অভ্যন্তরেও নতুন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দিয়েছে। ইরান আবারও বিশ্ববাজারে শীর্ষ তেল উত্তোলনকারী দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষে তোড়জোড় শুরু করেছে। বহু বছর ধরে ইরানের তেল উৎপাদন ও রফতানির ওপরে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের পর দেশটির ওপর থেকে অধিকাংশ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা রয়েছে। তাই বর্তমানে ইরানও তার তেল উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ তৎপর। চলতি বছরে দৈনিক ১৫ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলনের পরিকল্পনা করছে দেশটি। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় তেলের সরবরাহ আরও বাড়বে।
মাত্র দেড় বছরে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ১০৮ থেকে মাত্র ৩৭ ডলারে নেমে আসে। তেলের নজিরবিহীন দরপতনের চাপ সামলাতে যুক্তরাষ্ট্রের তেল প্রতিষ্ঠানগুলোকে মাসুল দিতে হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। শুধু গত বছরেই তেল শিল্পে জড়িত যুক্তরাষ্ট্রের ১ লাখ কর্মী ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। চলমান পরিস্থিতিতে ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র তেল উৎপাদন কমাতে বাধ্য হবে। তবে বাজারের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট হবে না।