আগামী বাজেটে সব ধরনের জ্বালানি তেল আমদানিতে আগাম কর প্রত্যাহার (এআইটি) করা হচ্ছে।
জাতীয় দৈনিক যুগান্তর এমন একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ি, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অপ্রত্যাশিতভাবে ওঠানামার কারণে আমদানি করা তেলের শুল্কায়নে সৃষ্ট জটিলতা কমাতে জ্বালানি বিভাগের সাথে আলোচনা করে আগামী বাজেটে আমদানি পর্যায়ে তেলের বিদ্যমান অগ্রিম আয়কর, ট্যারিফ ভ্যালু ও ন্যুনতম মূল্য প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।
পরিশোধিত, অপরিশোধিত, মোটর স্পিরিট, এভিয়েশনসহ অন্যান্য স্পিরিট, জেট ফুয়েল, সাদা স্পিরিট, ন্যাপথা, জে.পি-১, জে.পি-৪, কেরোসিন, হালকা ডিজেল, হাইস্পিড ডিজেল ও ফার্নেস তেলসহ ১৩ ধরনের জ্বালানি তেলের অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
বর্তমানে জ্বালানি তেল আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, আগাম কর ২ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশসহ মোট শতকরা ৩৪ শতাংশ শুল্ককর দিতে হয়। অগ্রিম কর উঠে গেলে এ হার ২৯ শতাংশে নেমে আসবে। অর্থাৎ শুল্ক থেকে পাঁচ শতাংশ খরচ কমবে। এতে তেল আমদানিতে খরচ অল্পকিছু কমবে বিপিসি’র।
সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যে জ্বালানি তেল বিক্রির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করা হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে এখানেও বাড়ানো হবে। আবার কমলে এখানেও কমানো হবে। জ্বালানি তেলে আর কোনো ভর্তুকি রাখা হবে না। জ্বালানি বিভাগ এই নিয়ম তৈরি করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করা আইএমএফ এর প্রতিনিধি দলকে এভাবে জ্বালানি তেল নির্ধারণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
কিছুদিন আগে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেক ছিল তখন প্রতিবেশি দেশ ভারতসহ অন্য অনেক দেশ কর কমিয়ে দিয়েছিল। ভারতে সব সময় আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ হয়। কর কমানোর ফলে আর তেমন বেশি দাম বাড়াতে হয়নি। এভাবে সমন্বয়ের ফলে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ কম পড়ে।
কর বেশি থাকলে আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে সাধারণ মানুষ তেমন সুবিধা পাবে না। আবার বাড়লে বেশি দিতে হবে।
তাই তেলের অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। অল্প হলেও এর সুফল সাধারণ মানুষ পাবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে জ্বালানি তেল উৎপাদন হয় না, আমদানি করতে হয়। তাই তেল থেকে অগ্রিম আয়কর আগেই তুলে নেওয়া উচিত ছিল। এখানে কোনো ধরনের অগ্রিম আয়কর থাকা উচিত নয়। কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। তেলের দাম কমলে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য অর্জন কিছুটা সহজ হবে।
কর কমানো হলো, কিন্তু বাজারে এর প্রতিফলন হলো না। যদি এমন হয় তবে তা যৌক্তিক হবে না। বাজারে তেলের দামে এর প্রতিফলন দেখতে চাই।
একই সাথে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন দরকার। জ্বালানি তেল আমদানির কার্যাদেশ দেয়া, জাহাজ ভাড়া করা থেকে শুরু করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত ঘাটে ঘাটে অব্যবস্থাপনা, অপচয়, দুর্নীতি। এতে খরচ বাড়ছে। তাই এগুলো বন্ধ না হলে এই অল্প সুবিধা কপ্পুরের মত উবে যাবে। চোখে দেখা যাবে না। কর তুলে নেয়ার যে সুবিধা, যে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত; তা সাধারণ মানুষ পর্যন্ত পৌঁছবে না। তাই কর তুলে নেয়ার মত ইতিবাচক সিদ্ধান্তের সাথে জ্বালানি তেল আমদানির ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে।
Prev Post