জ্বালানি তেলে আরও বেশি ভর্তুকি দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক/বাসস:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে আরও বেশি ভর্তুকি দেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির চাকাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
তিনি বলেন, আরও ভর্তুকি মানে জাতীয় বাজেটের সিংহভাগ খেয়ে ফেলবে, ফলে দেশের উন্নয়নের চাকা থমকে যাবে।
তেল, বিদ্যুৎ, সারসহ বিভিন্ন খাত মিলিয়ে সরকারকে প্রতি বছর ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়, এমন তথ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, ‘সরকার আর কত টাকা ভর্তুকি দেবে?’
বাজেটের সব টাকা ভর্তুকিতে দিয়ে দিলে সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন এ অংশগ্রহণ এবং লন্ডন ও ফ্রান্সে দু’সপ্তাহের সফর বিষয়ে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব নিয়ে করা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবনে উপস্থিত সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি এই প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সারা বিশ্বেই তেলের দাম বেড়ে গেছে। পাশর্^বর্তী দেশেও বেড়েছে। কাজেই ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি উচ্চমূল্যে বিশ^ বাজার থেকে সরকারের তেল ক্রয় করে আনার বিষয়টি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, শুধু ডিজেলের পেছনেই ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। বিদ্যুৎ এবং আনুসাঙ্গিক সবকিছু মিলিয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে। আরও কত টাকা ভর্তুকি দিতে পারব। আমাদের উপার্জনটা কী? আমাদের নিজস্ব কী সম্পদ আছে? কাজেই আপনাদের এটাও বিবেচনা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের বিদ্যুতে বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকি। যে সারের দাম ৯০ টাকা ছিল, সেটি আমরা মাত্র ১৫ থেকে ১৬ টাকায় কৃষকের হাতে পৌঁছে দিচ্ছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছি।
জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ সম্পর্কে তাঁর সরকার সবসময়ই সচেতন উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার সময় গ্রাম পর্যন্ত নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। জিনিসপত্রের দাম যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, তার সব রকম ব্যবস্থাও নিয়েছি। কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সচল থাকে তার ব্যবস্থা নিয়েছি। বিভিন খাতে প্রণোদনা দিয়েছি। মূল্যস্ফীতি কমাতে ব্যবস্থা নিয়েছি। সবই তো করছি। কিন্তু তেল তো আমাদের কিনে আনতে হয়। সেই কেনা তেলে আবার ভর্তুকি দিয়ে জনগণকে দিতে হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের খাদ্যের যাতে কষ্ট না হয়, সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে নজর আছে। আমরা তো বিনা পয়সায় খাদ্য দিচ্ছি, বিনা পয়সায় মানুষকে সাহায্য করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, টাকা তো সবাই আয় করে। বাড়ি গাড়ি সবই ঠিক আছে, কোনো দিকেই কমতি নেই। কিন্তু সেদিক বিবেচনা করলে ট্যাক্স কতজন দেয়? সঠিকভাবে কতজন সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করে? এ সংখ্যা কিন্তু খুবই কম। ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার দিকেই তো সবার নজর। সেটাই হলো বাস্তবতা। তাহলে সরকারের টাকাটা আসবে কোথা থেকে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক উন্নত দেশেও খাদ্যের জন্য হাহাকার চলছে। মানুষ বাজারে যায়, সুপার মার্কেট খালি। আমি এটা খোদ লন্ডনের কথা বলছি। আমাদের দেশে কিন্তু সে হাহাকার দেখেননি। কাজেই আপনাদের এটাও বিবেচনা করতে হবে, একটা সরকারের পক্ষ থেকে কতটুকু করা সম্ভব।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা সময় বিদ্যুতের জন্য খুব হাহাকার ছিল। সে বিদ্যুৎ এখন আমরা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি। কিন্তু তার পরও তো বিদ্যুতে আমাদের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচও তো আমরা তুলতে পারছি না।
বাস ও অন্যান্য পরিবহনের ভাড়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেশে ছিলাম না ঠিক, তবে দেশের সঙ্গে ছিলাম না, তা তো নয়। ডিজিটাল যুগ। বিভিন্ন মাধ্যমে বারবার যোগাযোগ হয়েছে। যারা ভাড়া বাড়াচ্ছিল তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এরপর একটি যৌক্তিক পর্যায়ে ভাড়া রাখা হয়েছে।
সরকার ২৫ কোটি ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছে বলেও সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন,‘কোভিড -১৯ টিকা থেকে দেশের কেউ বাদ যাবে না। সরকার বস্তিবাসী ও শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় ৯ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৪ দশমিক ৫ কোটি ডবল ডোজ এবং বাকি একক ডোজ। কোভিড -১৯ টিকা সরকার বিনামূল্যে দিচ্ছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি টিকা কিনতে অনেক টাকা খরচ হয়।
এছাড়াও, একটি একক কোভিড -১৯ পরীক্ষার জন্য ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। জনগণকে এটা মাথায় রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী
অন্যদিকে তিনি বলেন যে, তাঁর সাম্প্রতিক ফ্রান্স সফরের সময়, কোভ্যাক্স সুবিধার অধীনে দেশটি বাংলাদেশকে আরও ২০ লাখ কোভিড -১৯ টিকা সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছে।