জ্বালানি তেল: লাভ করলেও দাম কমানোর উদ্যোগ নেই

বিশেষ প্রতিনিধি:
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে। আর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লাভ করছে। আর এই লাভ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে গিয়ে। লাভ করলেও দেশে দাম কমানোর কোন উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। প্রায় দুই মাস ধরে দাম কমতে থাকলেও এখনও পর্যবেক্ষণে আছে জ্বালানি বিভাগ। এখনও বলছে তারা বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
জ্বালানি বিভাগ বলছে, দেশের বাজারে তেলের দাম এখনই কমছে না। কয়েক মাস পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিপিসি ডিজেল ও কেরোসিনে লিটারপ্রতি ১ টাকা থেকে ২ টাকা করে লাভ করেছে। এখন এই লাভ লিটারে প্রায় ৫ টাকায় পৌঁছেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে তার সুবিধা দেশে পেতে এক মাস লেগে যায়। সেই হিসেবে ৭০ ডলারের সুবিধা পেতে আরও সময় লাগবে। তারমানে এখনই লাভ হচ্ছে। আগামী মাসে আরও লাভ হবে।
জ্বালানি বিভাগের উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমেছে। তবে এখনও স্থিতিশীল পর্যায়ে আসেনি। কয়েক মাসনির্দিষ্ট দামে জ্বালানি তেলের মূল্য স্থিতিশীল থাকলে তখন কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দেশের বাজারে মূল্য কমাতে হলে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে তার প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু এখন তা করে বরং পর্যবেক্ষণের কথা বলা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রন সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় নিম্নমুখী তেলের দাম। আবারও জীবনযাত্রায় বিধি নিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এতে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তেলের বড় সরবরাহ ও ব্যবহারকারী কয়েকটি দেশের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে প্রায় দুই মাস ধরে তেলের দাম কমছে।
১লা নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮৪ ডলার ১৫ সেন্ট। ১৭ই ডিসেম্বর তা ছিল ৭০ ডলার ৮৬ সেন্ট। দেড় মাসে ব্যারেলপ্রতি ১৩ ডলার ২৯ সেন্ট কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ২০শে অক্টোবর আদর্শ ক্রুড অয়েলের মূল্য ছিল ৮৫ ডলার ৮২ সেন্ট। ১৭ই ডিসেম্বর হয় ৭৩ ডলার ৫২।
করোনা মহামারির কারণে কমে যাওয়া জ্বালানি তেলের দাম চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বাড়তে থাকে। এপ্রিল মাসে ব্রেন্ট অয়েল প্রতি ব্যারেলের দাম ৬০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ৫ই জুলাই দাম ওঠে ৭৭.৩১ ডলারে। ২৭শে সেপ্টেম্বর হয় ৭৮.৭২ ডলার। ২০শে অক্টোবর দাম বেড়ে হয় ৮৫.৮২ ডলার।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে গেলে ৩রা নভেম্বর দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিন লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানো হয়। কিন্তু এর দুএক দিন পর থেকেই জ্বালানি তেলের দাম আবার কমতে থাকে।
দুই কারণ দেখিয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হওয়ায় লোকসান আর প্রতিবেশি দেশে বেশি হওয়ায় পাচারের শঙ্কা। এদুটো কারণই এখন সমাধান হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে। কমেছে ভারতেও।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে দেশেও কমানো হবে বলে জানানো হয়েছিল। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে কমানোর কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
বিপিসি এখনও বলছে, তেলের দাম কমলেও তা এখনও স্থিতিশীল নয়। আবার যে কোন সময় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়তে পারে। তাই এখনই দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নয়। বিপিসির লাভের ধারা কতদিন বজায় থাকবে, সেটিও দেখার বিষয়। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে একদিন দাম কমলে পরের দিন আবার বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যে বাজার পর্যবেক্ষণ এবং একটা দীর্ঘ সময়ব্যাপী স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি না হলে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন।
অল্পকিছু দিন বিপিসি যে লোকসান দিয়েছিল তাও কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু এখনও স্থানীয় বাজারে তার কোন প্রতিফলন নেই। স্থানীয় বাজারে দাম কমানোর উদ্যোগ নেই। জ্বালানি বিভাগ বা বিপিসিতে কচ্ছপ গতিতে এগোচ্ছে এবিষয়ে আলোচনা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় এখন দেশেও জ্বালানি তেলের দাম কমা উচিত।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ নভেম্বর বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম বলেন, দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারকে আরও ধৈর্যশীল হওয়া উচিত ছিল। কারণ তেলের দাম সব সময় ওঠানামা করেই। তবে দাম কমালে তার সুফলও নিশ্চিত করতে হবে। ডিজেলের দাম কমলে পরিবহন ভাড়া যাতে কমে সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।
তেল বিক্রিতে ৭ বছরে মুনাফা
৪৩ হাজার কোটি টাকা
জ্বালানি বিভাগের তথ্যমতে, টানা প্রায় ৭ বছরে (২০১৪-এর জুন থেকে ২০২১ সালের জুন) ৪৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে বিপিসি। ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিসি মুনাফা করেছে ৪৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে আরও প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স-ভ্যাট দিয়েছে বিপিসি।