জ্বালানি নিয়ে স্পষ্ট রূপরেখা চান ব্যবসায়ীরা
বালানি নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করতে পারছে না। এজন্য জ্বালানি নিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখা চান তারা। এছাড়া ১০০টি ইকোনমিক জোন নির্মাণের যে পরিকল্পনা হয়েছে তারও একটি রূপরেখা চান তারা।
রাজধানীর দিলকুশায় বিসিআইসি ভবনে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) বোর্ডরুমে এক সেমিনারে ব্যবসায়ী নেতারা এ দুটি রূপরেখা চান। বিসিআই আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বিসিআই সভাপতি একে আজাদের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ম. তামিম। বক্তব্য রাখেন বিসিআইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল, বিপিজিএমইএ সভাপতি জসিম উদ্দিন, আইসিসি সভাপতি মাহবুবুর রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহ-সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ, বিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহ-সভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ প্রমুখ।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে জ্বালানি নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তা না থাকায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গতি আসছে না। তারা জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে দ্রুত দেশীয় কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের তাগিদ দেন। বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ ও এলএনজি আমদানির ফলে বাংলাদেশ থেকে বিরাট অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাবে বলে তারা মন্তব্য করেন। তারা শিল্পায়ন প্রক্রিয়া জোরদারের লক্ষ্যে আগামী ২০ বছরের জন্য শিল্পায়নের একটি রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানান। একই সঙ্গে তারা ২০১৫ সালের জাতীয় শিল্পনীতি ঘোষণার পর একে আইনে পরিণত করারও সুপারিশ করেন।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এ সময় বলেন, আমি অনেক আগেই বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ ও সিএনজি বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছিলাম। আজ এটা নিয়ে নড়াচড়া শুরু হয়েছে। দাম বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এটাই সমাধানের পথ নয়। মন্ত্রী বলেন, গ্যাসের অভাবে বিসিআইসির সার কারখানাগুলো বন্ধ রয়েছে। সরকার নিজের কারখানাগুলোই চালাতে পারছে না, আপনাদের কিভাবে গ্যাস দেবে? গ্যাস নেই এটি নিশ্চিত থাকুন আপনারা। এলএনজি কবে আসবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বিদ্যুতের ওপর ভরসা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে সরকার বিসিক শিল্পনগরীগুলো সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন নতুন অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলছে। এসব শিল্পনগরী ও অর্থনৈতিক জোনে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে।
মূল প্রবন্ধে ড. মোহাম্মদ তামিম বলেন, আমাদের অর্থনীতি স্বল্প জ্বালানির অর্থনীতি। বিভিন্ন দেশের তুলনায় মাথাপিছু আয়ের অনুপাতে আমাদের জ্বালানি ব্যয় কম। তবে মধ্য আয়ের দেশে যেতে হলে জিডিপিতে শিল্পের অবদান বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে জ্বালানি ব্যবহার বাড়ানোর বিকল্প নেই। তৈরি পোশাকশিল্প ৫০ বিলিয়ন ডলারের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তাতে জ্বালানির ব্যবহার দ্বিগুণ করতে হবে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ করতে হলে শ্রমঘন শিল্প থেকে বেরিয়ে এসে কম জনবলে উচ্চ উৎপাদনে সক্ষম শিল্প গড়ে তুলতে হবে। শুধু তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর ভরসা করে মধ্য আয়ের দেশ হবে না বলেও তিনি মত দেন। তিনি প্রাধিকার হিসেবে শিল্পে গ্যাস প্রদান, সিএনজি বন্ধ করে দেয়া, বাসাবাড়িতে গ্যাস না দিয়ে এলপিজির ব্যবস্থা করা, সিএনজি ও পেট্রোলের মূল্য সমন্বয় করা, আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর ওপর আস্থা রাখা, কয়লা উত্তোলন ও ব্যবহার, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিরগুলোর পুনর্গঠন, দক্ষ জনবল তৈরি, বেসরকারী খাতের ওপর শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিসিআই সভাপতি একে আজাদ বলেন, আমানত নিয়ে ব্যাংক বসে আসে। কিন্তু বিনিয়োগ হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণÑ জমির স্বল্পতা ও জ্বালানি নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকা। দেশি বিনিয়োগকারীরাই যেখানে বিনিয়োগে আসছে না, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ আমরা কিভাবে আশা করতে পারি? ইকোনমিক জোনের কথা শুনে আসছি, কিন্তু কোনটা কবে হবে তা আমরা কেউ জানি না। তাহলে বিনিয়োগের পরিকল্পনা কিভাবে করব আমরা?
আইসিসি সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার গ্যাস সংযোগের জন্য টাকা নিয়ে যদি সংযোগ না দেয়, তাহলে আমরা কার ওপর আস্থা রাখতে পারি? বাসাবাড়িতে এলপিজি দিয়ে দেন, কালকেই সিএনজি বন্ধ করে দেন। ক্যাপটিভ ও গ্রিডের পাওয়ারের মূল্যের মধ্যে সমন্বয় করার পরামর্শ দেন তিনি।