টেংরিটিলা ও মাগুরছড়ায় ৫০ হাজার কোটি টাকার গ্যাস নষ্ট হয়েছে

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, টেংরাটিলা গ্যাস ক্ষেত্রের ক্ষতি আদায়ের জন্য সরকার যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি। এই ক্ষেত্র থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার গ্যাস পুড়ে গেছে। ক্ষতি আদায়ের দাবি জানান তিনি।
গতকাল পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনে মাগুরছড়া দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় জাতীয় কমিটির আহবায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটে।। অন্যদিকে ছাতকের টেংরাটিলা নামে পরিচিত ছাতক গ্যাসফিল্ডে ২০০৫ সালে ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন পরপর দুটো বিস্ফোরণ ঘটে।
সভায় বলা হয়, কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতার জন্যই টেংরাটিলার এই ভয়ংকর ঘটনা ঘটে। পুরো গ্যাসক্ষেত্র নষ্ট হলে পেট্রোবাংলার প্রতিবেদন মতে তার পরিমাণ ৩০৫.৫ বিসিএফ আর বাপেক্স-নাইকো’র রিপোর্ট মতে ২৬৮ বিসিএফ।
আনু মুহাম্মদ বলেন, গড় হিসাব বিবেচনা করলে মাগুড়ছড়া ও ছাতক টেংরাটিলার বিস্ফোরণগুলোতে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত প্রমাণিত সর্বমোট গ্যাস মজুতের মধ্যে কমপক্ষে প্রায় ৫৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ধ্বংস হয়েছে। মাগুড়ছড়া ও টেংরাটিলায় গ্যাস সম্পদসহ ক্ষতির হিসাবে মার্কিন ও কানাডার কোম্পানির কাছে আমাদের পাওনা দাঁড়ায় কমপক্ষে ৫০ হাজার কোটি টাকা (মাগুরছড়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য শেভরণের নিকট ২০ হাজার কোটি টাকা এবং টেংরাটিলায় ২ দফা ক্ষয়ক্ষতির জন্য নাইকোর নিকট ৩০ হাজার কোটি টাকা)। এই পরিমাণ জ্বালানি খাতে গত পাঁচ বছরের বাজেট বরাদ্দের চাইতেও বেশি। যদি দীর্ঘমেয়াদে জীব-বৈচিত্র বিপর্যয়সহ পরিবেশ ক্ষতি বিবেচনা করি, যদি মানুষের ক্ষতির বর্তমান ও ভবিষ্যত্ বিবেচনা করি, যদি এই গ্যাস সম্পদের অভাবে বর্তমান বিদ্যুত্ সংকটের ক্ষতির হিসাব যোগ করি তাহলে এর পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বলা হয়, গত দুই বছরেরও অধিক সময়ে সারাদেশের বিদ্যুৎ উত্পাদনে যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার হয়েছে, তার চাইতে এই দুটো ক্ষেত্রে যে পরিমাণ গ্যাস নষ্ট হয়েছে এর পরিমাণ বেশি। এই বিশাল ক্ষতি নিয়ে কোন সরকারকে কখনো কথা বলতে শোনা যায়নি, মার্কিন কোম্পানি শেভরন ও কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর কাছ থেকে এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ আদায় করতে কোনো সরকারই উদ্যোগ নেয়নি। উল্টো তাদেরকে নানারকম ছাড়, ভর্তুকি ও সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ নিয়ে একটা হাস্যকর রকম কম অংকের টাকা কখনো কখনো বলা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণের যথাযথ অর্থ আদায় করে তা জ্বালানি খাতে সক্ষমতা বিকাশসহ দেশের উন্নয়নে তা ব্যবহার করার দাবি জানান জাতীয় কমিটির নেতারা।