ট্রান্সফরমার কিনতে গ্রামের গ্রাহকে টাকা দিতে হবে না

গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের একটি বড় দুর্ভোগ কমতে যাচ্ছে

এখন থেকে আর গ্রাহকদের নিজস্ব টাকায় ট্রান্সমিটার কেনা লাগবে না। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নিজস্ব টাকায় ট্রান্সমিটার সরবরাহ করবে। এতে শহরের গ্রাহকদের সাথে বৈষম্যও কিছুটা কমবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) তাদের নীতি পরিবর্তন করে এই নিয়ম করেছে। এতদিন কোন ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেলে কিম্বা নষ্ট হলে তা গ্রাহকদের নিজস্ব টাকায় কিনতে হত।

একটি ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে অনেক গ্রাহক বিদ্যুৎ সেবা নিয়ে থাকেন। কোন কারণে ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেলে পুরো একটি এলাকায় অন্ধকারে থাকে। গ্রাহকরা নিজস্ব উদ্যোগে ট্রান্সফরমার কেনার টাকা জমা না দেয়ার আগ পর্যন্ত আর বিদ্যুৎ পাওয়া যেত না। টাকা জমা দেয়ার পরও দিনের পর দিন এরজন্য অপেক্ষা করতে হত। নীতি পরিবর্তন করায় এখন থেকে আর গ্রাহকদের ট্রান্সফরমার কেনার ভোগান্তি পোহাতে হবে না। আরইবিই তা দিয়ে দেবে।

বাংলাদেশে অন্য আর চারটা যে বিতরণ কোম্পানি আছে তারা নিজস্ট^ অর্থেই ট্রান্সফরমার সরবরাহ করে। শুধু আরইবিতেই ভিল্পæ নিয়ম ছিল। এটা ছিল শহর আর গ্রামের গ্রাহকদের মধ্যে একটা বৈষম্য। শহরের বিতরণ কোম্পানিগুলো ট্রান্সফরমার নষ্ট হলে কিনে দেয়। কিন্তু গ্রামে, আরইবি তা করে না।

বিআরইবি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন এবিষয়ে এনার্জি বাংলাকে বলেন, আরইবি’র নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতদিন ট্রান্সফরমার পুড়ে গেলে গ্রাহকদের নিজস্ব টাকায় কিনতে হতো। আগামীতে আর তা কিনতে হবে না। আরইবি কর্তৃপক্ষ এখন থেকে ট্রান্সফরমার কিনে দিবে। তিনি বলেন, তবে ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ার সংখ্যা কমাতে হবে। আরইবি সেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। পুড়ে যাওয়ার মহৃল কারণ বিতরণ ব্যবস্থা এবং ক্ষমতার বেশি বিদ্যুৎ নেয়া (ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার)। গ্রাহকরা সংযোগ নেয়ার সময় যে পরিমাণ লোডের কথা বলে, পরবর্তীকালে ব্যবহারের সময় কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে তা বাড়িয়ে ফেলে। অতিরিক্ত লোডের কারণে ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়।

এদিকে কম ক্ষমতার ট্রান্সফরমার পরিবর্তন ও নতুন নিয়ম চালু করার জন্য ৭০ হাজার ট্রান্সফরমার কিনতে যাচ্ছে আরইবি। আগামী দুই বছরে পর্যায়ত্রক্রমে নতুন ট্রান্সফরমারগুলো প্রতিস্থাপন করা হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সহৃত্র জানায়, আরইবি’র এই ৭০ হাজার ট্রান্সফারমার স্থাপন করতে ৮১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। এরমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হবে ৭৬৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। বাকী টাকা অর্থাৎ ৭৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা দেবে আরইবি। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে।

নতুন কিনতে যাওয়া ট্রান্সফরমারগুলো বিভিন্ন ক্ষমতার হবে। এরমধ্যে ১০ কেভিএ ক্ষমতার চার হাজার, ১৫ কেভিএ’র এক হাজার ৯০০টি, ২৫ কেভিএ’র দুই হাজার ২৩০টি, ৩৭ দশমিক ৫ কেভিএ’র ১০ হাজার, ৫০ কেভিএ’র পাঁচ হাজার, ৭৫ কেভিএ’র দুই হাজার, ১০০ কেভিএ ক্ষমতার পাঁচ হাজার এবং ২০০ কেভিএ ক্ষমতার দুই হাজারটি ট্রান্সফরমার কেনা হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ি,  প্রয়োজনের চেয়ে কম ক্ষমতার (ওভারলোডেড) ট্রান্সফরমার আছে ৭৬ হাজার ৪৮৩টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে আরইবিতে। অর্থাৎ শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়।

ওভারলোডের কারণে প্রতিনিয়ত ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়। অনেক সময় চুরিও হয়। চোখের সামনে কয়েক টন ওজনের ট্রান্সফরমার চুরি যায়, এলাকার মানুষ বুঝতেই পারে না। অভিযোগ আছে আরইবি সংশ্লিষ্ঠ  ব্যক্তিদের যোগসাজসেই ট্রান্সফরমার চুরি হয়। অন্যদিকে পুরানো এবং নানা দুর্ঘটনার কারণে দেশে প্রতি মাসে কয়েক হাজার ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়।  অব্যবস্থাপনা ও বিদ্যুৎ সরবরাহে অনিয়মের কারণে ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়। ক্ষমতার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ হলে পুড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এসব বিষয়ে গ্রাহকের পুরো দায় না থাকলেও তাকেই অর্থ দিয়ে এর প্রায়শ্চিত্ব করতে হয়। আর এই প্রায়শ্চিত্ব শুধু গ্রামের জন্য।