ডিজেলের দাম এত না বাড়িয়ে কর কমানো যেত
ডিজেল আর কেরোসিনের দাম এক লাফে ২৩ শতাংশ বাড়াল। আর এতে যা হওয়ার তাই হলো। অস্থির হয়ে উঠল গোটা দেশ।
ক্ষমতাবান অর্থাৎ পরিবহন মালিকরা ঠিকই তাদের বাড়তি টাকা আদায়ে পথে নামল।
কিন্তু নিম্ন, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নির্ধারিত আয়ের মানুষের আয় বাড়ানোর কোন উপায় তৈরি হলো না। তাই এসব মানুষদের দৈনন্দিন খরচ থেকে, পুষ্টির চাহিদা মেটানোর অর্থ দিয়ে এই বাড়তি অর্থ শোধ করতে হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি দাম কয়েকটা মাস যেতে না যেতেই আমাদের দাম বাড়িয়ে দিল। অথচ গত ছয় বছর ধরে লাভ হচ্ছে। তখন দাম কমানো হয়নি।
তিন যুক্তিতে দাম বাড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বাড়া, প্রতিবেশী দেশ ভারতে বাংলাদেশের চেয়ে দাম বেশি এতে পাচার হচ্ছে, আর চলমান উন্নয়ন কাজের জন্য এখান থেকে অর্থ জোগান দিতে হবে তাই এই খাতের আয় অব্যাহত রাখতে হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে আর এতে কেনার চেয়ে বিক্রির দাম কম এটা ঠিক। কিন্তু পাচার হওয়ার দায় কি জনগণ নেবে। পাচার হওয়ার দায় সাধারণ মানুষকে দিতে হবে? আর পাচার হওয়াই যদি কারণ হয়ে থাকে তাহলে গত কয়েক বছর ধরেই ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের দাম কম, এত দিন কেন এবিষয় সামনে আসেনি?
এই খাতের আয় অব্যাহত রাখতে হবে। তাই কী এই দাম বাড়ানো?
আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করতে দাম বাড়ানো হলো, কিন্তু তাই বলে একবারে ১৫ টাকা?
একবারে লিটারপ্রতি ১৫ টাকা কেন?
ছয় বছর ধরে লাভ করেছে বিপিসি। পুরো করোনার প্রায় দুইবছর দ্বিগুণ লাভ করেছে। সেসব টাকা দেশের অন্য উন্নয়ন কাজে এবং জ্বালানি খাতের চলমান উন্নয়ন কাজে খরচ করা হয়েছে।
করোনার পর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে এটা অনেক বড় ধাক্কা। এত দিন যাদের আয় ছিল না, যারা সবে কাজ শুরু করেছে, তাদের অবস্থান এখন খারাপ।
বছরে জ্বালানিখাতে যেখানে কয়েক হাজার কোটি টাকার লেনদেন, সেখানে মাসে ২০ কোটি টাকা কী সামান্য নয়?
দাম না বাড়ালেও বছরে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা লোকসান হতো। এই অর্থ ভর্তুকি দিয়ে বা কর ছাড় দিয়ে যোগান দেয়া যেত। এখন ডিজেল আমদানিতে প্রায় ৩৪ শতাংশ কর। লিটারপ্রতি ডিজেলে কর ও ভ্যাট প্রায় ১৯ টাকা। এই কর কিছুটা কমালে অন্তত লিটারপ্রতি একবারে ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না।
বিপিসি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ হাজার ৭৪ কোটি টাকা ভ্যাট, ১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা আমদানি শুল্ক, ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা আয়কর এবং ৩০০ কোটি টাকা লভ্যাংশ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে। এ ছাড়া ওই অর্থবছর সরকার বিপিসির ৫ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত অর্থ নিয়ে নিয়েছে। সরকারি কোষাগারে গেছে মোট প্রায় ১৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা।
অথচ লোকসান শুরুর পর আর কোন সময় দেয়া হলো না। সাথে সাথে দাম বাড়িয়ে দেয়া হলো।
এখন অপেক্ষা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে যেন অবশ্যই আবার সাথে সাথে কমানো হয় এবং সমপরিমাণ কমানো হয়।