ঢাকা ও আশপাশের নদীর পানি বাড়ছে

উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলার নিুাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটেছে। রাজধানী ঢাকার আশপাশের বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বেড়ে গেছে। দেশের নদ-নদীর ২০টি স্থানে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এ তথ্য জানিয়েছে। তারা জানায়, আগামী ৪৮ ঘন্টায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৯০ পানি মনিটরিং স্টেশনের মধ্যে ৬৫টি স্থানে পানি বেড়েছে ও ২০টি স্থানে পানি কমেছে। ৩টি স্থানে পানি অপরিবর্তিত রয়েছে এবং ২টি স্থানের তথ্য পাওয়া যায়নি।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে ৭২ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীগুলোর পানির পরিমাণ বাড়বে। ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীগুলোর পানির পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয় আগামী ৪৮ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর আশেপাশের এলাকা কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলাগুলোর নিুাঞ্চলে এবং গঙ্গা-পদ্মা নদীর আশেপাশের এলাকা রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলাগুলোর নিুাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকতে পারে। অপরদিকে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলাগুলোতে নিুাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামে ধরলার নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রে পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সরকারি হিসাব মতে জেলার ৯ উপজেলায় ১ লাখ ১০ হাজার ৪শ ৭৬ পরিবারের ৪ লাখ ২৯ হাজার ৪শ ৮৫ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় ৯ উপজেলার ৪শ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক ও ৫০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রান সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ বেশিরভাগ বন্যা কবলিত মানুষদের। জেলা প্রশাসন থেকে ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও ১শ ৯২ মেট্রিক টন চাউল ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরন করা হয়েছে। নতুন করে ৯ উপজেলায় ২শ ৮ মেট্রিক টন চাউল ও ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা বন্যার্তদের মাঝে বিতরন করা হবে।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়া অব্যাহত থাকায় গাইবান্ধার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় ( সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা) ঘাঘট নদীর পানি মঙ্গলবার বিপদসীমার ৫৬ সে. মি. এবং বালাসী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৫০ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে ডুবে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরিতাবাড়ি চরের দোলন মিয়া নামের দু’বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বন্যা কবলিত জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি, সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে প্রায় ৩ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি। পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, তিস্তা ব্যারেজ দোয়ানী পয়েন্টে মঙ্গলবারও বিপদ সীমার ৫ সে. মি. উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। সোমবার থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করে। পানি বন্দি পরিবারগুলো মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

পাউবো সুত্র জানায়, পানি গতি নিয়ন্ত্রন করতে হাতিবান্ধা অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেটই খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে তিস্তার পানিতে হাতিবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চর এলাকারসহ গোটা জেলার ২০ গ্রামের ১০ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়ে। চর এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়া অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ২০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে যমুনা নদীর পানি মঙ্গলবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিুাঞ্চলসহ চরাঞ্চলের প্রায় ১৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক স্কুল কলেজ প্রায় ১৫টিসহ লাখো মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় ২৫’শ হেক্টর আবাদি জমি তলিয়ে গেছে। এদিকে এনায়েতপুরের খুকনীতে বন্যার পানিতে মামা-ভাগ্নির মৃত্যু হয়েছে। এরা হলো তাঁত ব্যবসায়ী হাজী খোরশেদ আলীর ছেলে আবু হুরায়রা (৩) ও তাঁত শ্রমিক ফুলচাঁন আলীর মেয়ে ফাইমা খাতুন (২)।
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, যমুনা নদীর পানি  বেড়ে যাওয়ায় জামালপুরের ৫টি উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার বেড়ে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। গত কয়েক দিনের যমুনা নদীর পানির তীব্র স্রোতে ইসলামপুর উপজেলার ২ টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে নতুন নতুন এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছে।
দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও গো খাদ্যের সংকট। বন্যা কবলিত এলাকার ১২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, বন্যার পানি বাড়লেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এদিকে বন্যা দুর্গতরা বলছে, সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মার পানি ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বর্তমানে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে জেলার সদর উপজেলাসহ তিনটি উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের নিম্মাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। নিম্মাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় এসব এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে।