ঢাকা-চট্টগ্রাম জ্বালানি তেল পাইপলাইন জানুয়ারিতে চালু হবে

ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : দেশের প্রথম ঢাকা-চট্টগ্রাম জ্বালানি তেল পরিবহন পাইপলাইন ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে চালু হতে যাচ্ছে। এটি বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে এপ্রিল থেকে। এতে বার্ষিক পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বাসস’কে বলেন, ‘পাইপলাইনটি শুধু জ্বালানি তেলের নিরাপদ পরিবহন নিশ্চিত করবে না, বরং খরচ ও জ্বালানি তেলের অপব্যবহারও দূর করবে।’ তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটারের এই জ্বালানি তেল পরিবহন পাইপলাইন বসাতে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাক। বড় ধরনের জটিলতা দেখা না দিলে, এটি ২৫ বছর ধরে বার্ষিক ৫৪ লাখ টন ডিজেল পরিবহন করার সক্ষমতা রাখবে। রাজধানীতে বছরে মাত্র ২৭ লাখ টন জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হয়।’ চেয়ারম্যান জানান, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তেল পরিবহন পাইপলাইনটি দেশের বার্ষিক চাহিদার ৬৫ শতাংশ ডিজেল পরিবহনে করতে হবে।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, বন্দর নগরীর পতেঙ্গা এলাকা থেকে গোদনাইল এবং পরবর্তিতে রাজধানীর উপকণ্ঠে ফতুল্লা পর্যন্ত প্রথম ভূগর্ভস্থ এই পাইপলাইনটি চালু করলে, প্রতি বছর জ্বালানি তেল পরিবহন খরচ প্রায় ২৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে নদী, রেল ও সড়কপথে দেশের অন্যান্য স্থানে বর্তমানে ডিজেল পরিবহন করা হয়। এই পরিবহন ব্যাবস্থায় প্রায়ই তেল চুরির ঘটনা ঘটছে।

প্রকল্পের বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পাইপলাইনটির মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন তেল পরিবহনের খরচ কমবে, অন্যদিকে সরবরাহ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার পাশাপাশি, পরিবেশ দূষণ রোধ করাও সম্ভব হবে।

প্রকল্পের নথি অনুসারে, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। তবে পেট্রোল ও অকটেন আগের মতো পুরোনো পদ্ধতিতেই যেমন- রেলওয়ে ওয়াগন ও নদীপথে ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে পরিবহন অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড দ্বারা বাস্তবায়িত প্রকল্পটি ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে ২৫০ কিলোমিটার, কুমিল্লা ও চাঁদপুরের মধ্যে ৫৯ কিলোমিটার এবং ফতুল্লা থেকে গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত ৮.৫ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে।

পাইপলাইন প্রকল্পটির অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে- জ্বালানি তেল খালাশের সময় তেল চুরি ও আশেপাশের সিন্ডিকেটের কারসাজি প্রতিরোধ করা। বিশেষ করে গোদনাইল ডিপোতে খালাসের সময় এধরনের ঘটনা ঘটে। জাহাজ মালিক ও সিন্ডিকেটের বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও, পাইপলাইনটির কাজ এখন সম্পন্ন হতে চলেছে।

সেচ মৌসুমের প্রস্তুতিতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে উত্তরের পরিবেশকদের নিযুক্ত করা হচ্ছে।
দেশের শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরাঞ্চলের জ্বালানি পরিবহন ইতোপূর্বে বাঘাবাড়ির পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্যাঙ্ক লরি বা রেলপথের উপর নির্ভরশীল হওয়ায়, কার্যত তাদের কাছে জিম্মি ছিল। এসব ব্যবস্থায় এ অঞ্চলের জ্বালানি তেল পরিবহন অহরহ বিভিন্ন লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।

বাংলাদেশ জ্বালানি তেল উৎপাদন করে না, তাই বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। প্রধান নদী বন্দরে নৌ-চলাচলের চ্যালেঞ্জের কারণে পণ্যবাহী জাহাজের উপর নির্ভর করে জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। পাইপলাইন এই নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি, দেশের জ্বালানি তেল সরবরাহের গতি সহজ ও ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।