তাপমাত্রা গড়ের চেয়ে ৭ ডিগ্রি বেশি, গরম বাড়বে আরও

বিডিনিউজ:

উত্তাপ নিয়েই গ্রীষ্ম আসে। তবে এবার বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাসটি আরও বেশি পোড়াচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকে।

ঘরে থেকে বের হলেই তীব্র গরমে হাঁসফাঁস, ঘরের ভেতরও গুমোট অবস্থা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ গেলে তো কথাই নেই, একেবারে সেদ্ধ হওয়ার দশা।

এপ্রিল ও মে মাস এমনিতেই বছরের উষ্ণতম মাস। এ সময় বাংলাদেশে সূর্য তাপ দেয় খাড়াভাবে। ফলে গরম থাকে বেশি। তবে এই সময়টায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে, তা দেখা যায় না সচরাচর।

ঢাকায় এপ্রিলে ৪০ ডিগ্রির বেশি উত্তাপ গত ছয় দশকেরও বেশি সময়ে দেখা গেছে কেবল দুই বার। ১৯৬০ সালের এই মাসে ঢাকায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড আছে। ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠছিল ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

আবহাওয়াবিদ শরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, “ঢাকার কথা চিন্তা করলে এপ্রিলে সাধারণত আমাদের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সারাদেশের কথা বিবেচনা করলে সেটা ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ আমরা স্বাভাবিক বা গড় তাপমাত্রার চেয়ে ৭ থেকে ৯ ডিগ্রি বেশি পাচ্ছি।”

কেন এবার এত তাপ? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই সময়ে যে উত্তাপটা থাকে, বৃষ্টি হলে কমে যায় সেটা। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে, ৪ তারিখের পর থেকে, আমাদের গোটা দেশে বৃষ্টিপাত অনেক কম, শূন্য বললেই চলে। হিট ওয়েভের পরিস্থিতিটি এ কারণে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।”

অপ্রত্যাশিত এই গরমে রোজার মধ্যে জনজীবনে নাভিঃশ্বাস উঠেছে।

মিরপুর থেকে বাড্ডাগামী বাসের যাত্রী আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “এই বছর মরুভূমির মতো হিট মনে হচ্ছে। সকালে বের হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে শরীরের ঘাম সব বের হয়ে যায়। এরপর আর ঘামও হয় না, শরীর জ্বলে। শক্তি পাই না, অফিসে বলেন বাসে বলেন, খালি ঝিমুনি আসে।”

যমুনা ফিউচার পার্কে কেনাকাটা করতে আসা রুবাইয়া ফারজানা পলি বলেন, “এর আগেও গরমে রোজা পড়েছে, কিন্তু এমন অসহ্য গরম এর আগে কখনও পড়েনি। জান যায় অবস্থা।”

কুড়িল-বিশ্বরোড এলাকায় রিকশাচালক মতিন মিয়া বলেন, “আগুনের মতো রইদ লাগে। এক-দুই খ্যাপ মাইরা আর টানন যায় না। বইয়া জিরানি লাগে। সব্বনাইশ্যা গরম পড়ছে এইডা।”

চৈত্রের শেষ সপ্তাহে এসে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বয়ে যাওয়া তাপদাহে হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে একটু প্রশান্তি পেতে মুখে পানি দিচ্ছেন একজন।

গরম বাড়বে আরও

চৈত্রের শেষ কয়েকটা দিনের অবস্থা আগাম বার্তা সত্য করে নতুন বছরের শুরুটা হয়েছিল তাপপ্রবাহকে সঙ্গী করে। বছরের দ্বিতীয় দিনে উত্তাপ বাড়ল আরও।

বৈশাখের প্রথমদিনে যেখানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে দ্বিতীয় দিনে একই জেলায় পারদ উঠেছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রিতে।

সবশেষ ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। আর ২০১০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের রেকর্ড রয়েছে।

তাপের রেকর্ড ভাঙছে রাজধানী ঢাকাও। বাংলা নববর্ষের দিন এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি। বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে তা আরও বেড়ে হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি।

আশঙ্কার বিষয় হলো, এই তাপমাত্রা কমার আভাস নেই, উল্টো বাড়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ শরিফুল নেওয়াজ কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির প্রবণতাটা আগামীকালও অব্যাহত থাকবে। এরপর কয়েকদিন স্থিতিশীল থাকবে, তারপর কিছুটা কমতে পারে। তবে খুব সহসাই খুব বেশি কমে আসবে না।”

“এখন যদি ওয়াইড স্পেসে বা দেশজুড়ে মুষলধারে বৃষ্টি হত, তাহলে হয়ত তাপমাত্রাটা কমে যেত,” বলেন তিনি।

প্রখর রোদ থেকে নিজেদের বাঁচাতে হাতে থাকা কাগজ মেলে ধরেছেন রিকশার যাত্রীরা

পূর্বাভাস কী?

অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, খুলনা বিভাগসহ ঢাকা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা ও পটুয়াখালী জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের বাকি অংশের উপর দিয়ে দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের।

বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর ফলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।