তিতাসের আবাসিকে প্রি-পেইড মিটার: সহজে বিল শোধের উপায় চায় গ্রাহক

আবাসিক সকল গ্রাহকের জন্য প্রিপেইড মিটার চালু করতে যাচ্ছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (তিতাস গ্যাস)। রাজধানীর কিছু এলাকায় প্রিপেইড মিটার প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে করা হবে। তবে প্রিপেইড মিটারের সাথে সহজে বিল শোধ করার উপায় চান গ্রাহকরা। জরুরি প্রয়োজনে বিল রিচার্জ করার সুযোগ চান তারা।

রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরা, বাড্ডা, তেজগাঁও, ক্যান্টনমেন্ট, কাফরুল, মিরপুর, খিলক্ষেত এবং উত্তরা ও এর আশপাশের আবাসিক গ্যাস গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটার প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। এই এলাকায় মোট দুই লাখ প্রিপেইড মিটার লাগানো হবে। ইতিমধ্যে প্রায় এক লাখ আবাসিক গ্রাহকের বাড়িতে জরিপ শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য এলাকাতেও প্রিপেইড মিটার প্রতিস্থাপন করা হবে। প্রাকৃতিক গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রকল্পের আওতায় এই মিটার লাগানো হচ্ছে। সিস্টেম লস কমিয়ে আনতে এই উদ্যোগ। প্রিপেইড মিটার প্রতিস্থাপন হলে মাসে ১৫ কোটি ঘনফুট ফুট গ্যাস সাশ্রয় হবে বলে আশা সংশ্লিষ্ঠদের।
প্রিপেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করার জন্য ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবিএল) সাথে চুক্তি করেছে তিতাস গ্যাস কর্তূপক্ষ। তাদের নিদির্ষ্ট শাখায় বিল দেয়া যাবে। অথবা ইউক্যাশের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং পদ্ধতিতে কার্ড রিচার্জ করা যাবে।
তবে এক ব্যাংকের মাধ্যমে অথবা শুধু ব্যাংকের মাধ্যমে কার্ড রিচার্জ করার সুযোগ থাকলে ঝামেলা পোহাতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে। গ্রাহকরা মনে করছেন, কার্ড রিচার্জ করার উপায় সহজ হতে হবে। যখন তখন রিচার্জ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। না হলে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে থেকে রিচার্জ করতে হবে। ঝক্কি একটা থেকেই যাবে। ভোগান্তি কমাতে মোবাইলে বিকাশ, রকেট কিম্বা অন্য কোন মাধ্যমে রিজার্চ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাহলে সুবিধা হবে। গ্রাহকরা বলছেন প্রিপেইড মিটারের মত যুগোপযোগী সেবা ব্যবস্থার বিল শোধের উপায়ও যুগোপযোগী এবং সব মাধ্যমেই হওয়া উচিৎ।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (তিতাস গ্যাস) এর সচিব মুনীর হোসেন খান এনার্জি বাংলাকে বলেন, প্রিপেইড মিটার প্রতিস্থাপন গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে। গ্রাহকরা যাতে আরও সহজে বিভিন্ন মাধ্যমে বিল রিচার্জ করতে পারে সে উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রিপেইড মিটারে গ্রাহকের খরচ ও অপচয় কমবে।
রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, যেহেতু প্রিপেইড মিটার তাই গ্যাস যেকোন সময় ফুরিয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মোবাইলের মাধ্যমে সহজে রিচার্জের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এখন ব্যাংকে গিয়ে গ্যাসের বিল দিতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ। তাই কয়েক মাসের বিল একবারে পরিশোধ করি। কিন্তু প্রিপেইড মিটারে তো বিল জমিয়ে রাখার সুযোগ থাকবে না। তাই সহজে বিল দেয়ার উপায় থাকতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তিতে আমরা মোবাইল ব্যাংকিং করতে পারি। মোবাইলের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন হয়, যেমন বিকাশ, রকেট ইত্যাদিও মাধ্যমে বিল শোধ করার উপায় থাকলে ভালো হয়।
বর্তমানে প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছেন এমন গ্রাহকরাও একই ধরনের অভিযোগ করেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শারমিন আহম্মদ বলেন, আমরা ৬ মাস ধরে প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছি। সবদিক থেকেই এটা ভালো। তবে রিচার্জ করাটা বেশ ঝক্কির। কয়েকবার খেয়াল রাখতে না পারায় তাৎক্ষনিক ভাবে রিচার্জ করতে না পেরে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমে বিল দেয়ার উপায় থাকলে এটি সহজ হতো। বিদ্যুতে যেমন হচ্ছে তেমন গ্যাসেরও হলে ভালো হয়।
তিতাস গ্যাসের আবাসিক গ্রাহক সংখ্যা ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৩৪টা। এরমধ্যে আবাসিক গ্রাহক ২৭ লাখ ৬৪ হাজার ২৪৭টা। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে তিতাস।
তিতাসের বকেয়া বিলের পরিমাণও অনেক। বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকের কাছে তিতাসের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পুঞ্জিভূত পাওনার পরিমান ছিল তিন হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। বকেয়ার পরিমান প্রতিবছরই বাড়ছে। গত বছর থেকে তিতাসের সাড়ে তিন ভাগ বকেয়া বেড়েছে। এই বকেয়ার পেছনে নানা কারণ থাকলেও গ্যাস বিল পরিশোধ ব্যবস্থাকেও দায়ী করেছেন অনেকে। বর্তমানে তিনটি ব্যাংকের শাখা থেকে গ্যাস বিল পরিশোধের ব্যবস্থা আছে, যা গ্রাহকের জন্য সময় ও খরচ সাপেক্ষ।
টাঙ্গাইল এলাকার বাসিন্দা রশীদ গণি বলেন, পল্লী বিদ্যুতের বিল ঘরে বসে যখন ইচ্ছা তখন বিকাশের মাধ্যমে শোধ করতে পারি। কিন্তু গ্যাস বিল দিতে বাজারে যেতে হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশে গ্যাস বিলও পল্লী বিদ্যুতের মত সহজ হওয়া উচিৎ।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রিপেইড মিটার নিয়ে এনার্জি বাংলাকে বলেন, ইতোমধ্যেই দুই লাখ প্রিপেইড মিটার সংযোগ দেয়া হয়েছে এবং আরো সংযোগের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে গ্যাসের সকল মিটার প্রিপেইড করা হবে। ঢাকা মহানগরীসহ সকল এলাকা থেকে পুরাতন গ্যাস পাইপ লাইন অপসারণ এবং প্রিপেইড মিটার প্রতিস্থানের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। আবাসিক এলাকায় শতভাগ প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন করা হবে।