তিনবছরে বিদ্যুতে ভর্তুকি তুলে নেয়ার পরিকল্পনা: আইএমএফ এর সাথে বৈঠক 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আগামী তিন বছর – প্রতিবছর চারবার করে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

ঢাকায় সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা এ পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিদ্যুতের ভর্তুকি ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে আইএমএফ। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) অব্যাহত লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রশংসা করেছে বলেও জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলায় পৃথক বৈঠক করেছে সফররত প্রতিনিধি দলটি।

পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন, এলএনজি আমদানি, সরবরাহ, বিক্রি ও রাজস্ব আয়ের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

পরিকল্পনা তুলে ধরে জানানো হয়েছে, বিদ্যুতের দাম অল্প অল্প করে বাড়ানো হবে, যেন গ্রাহকদের এক সাথে চাপ না বাড়ে। পর্যায়ক্রমে গ্যাসের ভর্তুকিও তুলে নেয়া হবে। জ্বালানি তেলের মতো বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি দেয়া হবে না।

২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারে ভর্তুকি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

আইএমএফ বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের বকেয়া বিল এবং বন্ডের মাধ্যমে তাদের কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে তা জানতে চান।

জানুয়ারি পর্যন্ত অনাদায়ী বিলের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ চলতি অর্থবছর বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার বন্ড ও নগদ অর্থ দিয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে সেই অর্থ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিতে নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে আসছে আইএমএফ।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো ভর্তুকি লাগবে কি না জানতে চেয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। রূপপুরের উৎপাদন খরচ কম হবে এজন্য ভর্তুকি লাগবে না বলে জানানো হয়েছে।

আগামী মার্চে রূপপুরের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা।

চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়া শুরু হয়েছে গতবছরের জানুয়ারিতে দেবে তারা। এরপর কয়েকবার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়ানোর পরও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বরাদ্দ ৮৪ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। আগামী বছরের বাজেটেও প্রায় একই পরিমাণ বরাদ্দ হতে পারে। এরমধ্যে বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং গ্যাসে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা।

আগামী ৬ ও ৭ই মে অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে আইএমএফ প্রতিনিধিরা সফর শেষ করবে।

ঋণের তৃতীয় কিস্তির আগে পর্যালোচনার জন্য আইএমএফের প্রতিনিধিদল ২৩শে এপ্রিল ঢাকায় আসে।

আইএমএফ যে ঋণ দিচ্ছে সেটা আদায় করার জন্য

মূলত নানা পরার্মশ দেয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে আছেন সংস্থাটির গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওয়। বিদ্যুৎ বিভাগের নেতৃত্বে ছিলেন সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান আর জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হুমায়ূন কবীর।