তিন বছরে বিশ্বের বাঘের সংখ্যা বেড়েছে

বিশ্বজুড়ে বাঘ সংরক্ষণে কাজ করছে এমন একটি সংস্থা বলছে, সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বিশ্বে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা ৪১৪৭। রোববার ঢাকায় শুরু হওয়া বাঘ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।

এর আগে সর্বশেষ হিসাবে এই সংখ্যা ৩৭০০ বলে জানানো হয়েছিল। সেই হিসেবে তিন বছরে বিশ্বের বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানানো হচ্ছে।

আয়োজকরা বলছেন, বাঘ বাঁচাতে বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে নেয়া উদ্যোগের কারণেই বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

আগামী ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুন করতে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত প্রথম বাঘ সম্মেলনে বেশকিছু কাজের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল।

তিনবছর পর বিভিন্ন দেশ তার কতটা বাস্তবায়ন করেছে এবং কতটা করতে পারেনি সেসব বিষয়ে আলাপ আলোচনা করতেই এবার ঢাকায় জড়ো হয়েছেন বিভিন্ন দেশের কর্তাব্যক্তিরা।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা আমির খানোভের কাছে জানতে চেয়েছিলাম বাঘ বাঁচাতে কি ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে তার দেশে?

মি. খানোভ বলেন, ”প্রধান যে সমস্যাটির কথা বলতে হবে সেটি হচ্ছে আইনগত দুর্বলতা। পাচারের বিষয়ে সেটি যথেষ্ট কঠোর ছিল না। তবে ২০১২ সালে আইনটি পরিবর্তন করে আরো কঠোর করা হয়েছে।”

”আর দ্বিতীয় সমস্যাটি বাঘদের আবাস বা বনাঞ্চল সংরক্ষণ করা। এ বিষয়েও কিছু কিছু কাজ শুরু হয়েছে। এখন কিছু সংরক্ষিত বনাঞ্চল গড়ে তোলার কাজ চলছে।”

যে ১৩টি দেশে বাঘ রয়েছে তাদের যৌথ প্ল্যাটফর্ম – ‘গ্লোবাল টাইগার ইনিশিয়েটিভ’-এর উদ্যোক্তা কেশভ ভার্মা বলছিলেন, নগরায়ন বণাঞ্চলের জন্য একটি বড় হুমকি। আর ভারত ও বাংলাদেশসহ এশিয়া অঞ্চলের বাঘের জীবনের জন্য সেটি একটি বড় সংকট।

তিনি বলেন, ”আপনি দেখবেন বাংলাদেশে এখন কেবল সুন্দরবন এলাকাতেই বাঘের অস্তিত্ব সীমাবদ্ধ। অথচ আগে চট্টগ্রাম এলাকাতেও বাঘ দেখা যেত। ভারতের ক্ষেত্রেও একইভাবে বলা যায়, যে ৪৩/৪৪টি জায়গায় বাঘ দেখা যেত এখন তার পরিধি ১২% পর্যন্ত কমে এসেছে। এর কারণ নগরায়ন বাড়ছে। সর্বত্রই বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। ব্রিজ তৈরি হচ্ছে, রাস্তাঘাট তৈরি হচ্ছে এবং বন জংগল কাটা পড়ছে।”

সম্মেলনে দেয়া তথ্য অনুসারে বাঘ প্রজননের দিক থেকে ভারত সবার প্রথমে এবং সেখানে প্রায় ১৭শ বাঘ আছে। বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। যদিও বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা সম্পর্কে হালনাগাদ কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। সর্বশেষ পরিসংখ্যানটিও ১০ বছর আগের। সে হিসা্বে বাংলাদেশের সুন্দরবনে ৪৪০টি বাঘ রয়েছে।

বাংলাদেশে এই বন্যপ্রাণীটি সংরক্ষণের পথে প্রধান চ্যালেঞ্জ সুন্দরবন এলাকার আশেপাশে বসবাসকারী লোকজনের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করা এবং বনাঞ্চল সংলগ্ন নৌপথ দিয়ে নৌযান চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ করা, বলছিলেন প্রধান বন সংরক্ষক ইউনূস আলী।

তার মতে, ”সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী জনগণের টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করা না গেলে বাঘের খাবার যেসব বন্যপ্রাণী সেগুলো থাকবে না। ফল বাঘ অভূক্ত থাকবে এবং প্রজনন ক্ষমতা থাকবে না। এটি প্রধান সমস্যা। আর দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো, সেখানকার পরিবেশগত ভারসাম্যগত পরিবর্তন ঘটছে বিভিন্ন ধরনের নৌযানের চলাচলের কারণে। এসব নৌযান থেকে যে তেল নির্গত হচ্ছে তাতে পানি ও পরিবেশ দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

বাঘ বাঁচাতে বন সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে সুন্দরবনের আশেপাশে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলায় পরিবেশবাদীদের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়েছে। সম্মেলনের আয়োজকরা বলছেন, যে গতিতে এই সংখ্যা কমে আসছে তাতে দ্রুত উদ্যোগ না নিলে আরো অনেক বন্যপ্রাণীর মতো শিগগিরই বিলুপ্ত হয়ে যাবে বাঘও। কারণ ১০০ বছরে বাঘের সংখ্যা এক লাখ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র চার হাজারে।– বিবিসি।