তেলের দরপতনে রেমিট্যান্স কমেছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্স বা প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ। কিন্তু গত বছর ও চলতি সময়ে বিশ্ববাজারে তেলের অব্যাহত দরপতনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্স আহরণে। বাংলাদেশ ব্যাংকের
হিসাব অনুযায়ী গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের গত ১১ মাসে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কম রেমিট্যান্স এসেছে।
২০১৬ সালের প্রায় প্রতি মাসেই অব্যাহতভাবে কমে চলেছে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমান। চলতি বছরের নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৫১.৯৫ মিলিয়ন ডলার যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১১ সালের নভেম্বর
মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৯০৮.১ মিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার যেখানে বিগত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এসেছিল ১৩.৯৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে রেমিট্যান্স আহরন কমেছে ৬.৮ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সকলেই এর জন্য
কার্যত আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মুল্য হ্রাস এবং অবৈধ হুন্ডি ব্যবসাকে দায়ী করেছেন।
বাংলাদেশি কর্মীদের প্রধান শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো (গাল্ফ কোঅপারেশন কাউন্সিল বা জিসিসিভুক্ত দেশ সমূহ) থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমান রেমিটেন্স আসা কমেছে। উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি আছেন
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। আবার, মোট রেমিটেন্সের ৬৫ শতাংশই পাঠান মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা বাংলাদেশিরা।
মধ্যপ্রাচ্যের তেল নির্ভর অর্থনীতি সাম্প্রতিক সময়ে কঠিন সময় পার করছে।
গত জানুয়ারিতে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ছিল ২০০৩ সালের পর সর্বনিম্ন। বলাবাহুল্য জিসিসিভুক্ত দেশ সমুহের অর্থনীতি এতে মারাত্নকভাবে আহত হয়েছে।
এসব দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। ফলে শ্রমের মজুরিও কমছে। অনেক কোম্পানি নিয়মিত বেতন দিতে পারছে না তার কর্মীদের। তাছাড়া, বিশ্বব্যাংক সুত্রে জানা যায়, সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে সৌদি আরব, ওমান, কাতার, ইউএই
সহ এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশে পন্য, সেবা মুল্য প্রভূত বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে প্রবাসী শ্রমিক কর্মচারীদের আয় কমে গেছে। ফলে তারা দেশে আগের মত টাকা পাঠাতে পারছে না।
তেলের দরপতনের কারনে সৃষ্ট মন্দার প্রভাবে প্রবাসীরা অধিক হারে থাকেন এমন অধিকাংশ দেশেই মুদ্রার অবমুল্যায়ন হয়েছে। টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য কম থাকায় প্রবাসীরা আগের মতো অর্থ পাঠাচ্ছেন না। তাছাড়া ব্যাংকের তুলনায়
খোলা বাজারে ডলারের মূল্য বেশি থাকায় ভিন্ন উপায়ে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ঢুকছে।
এদিকে বিশ্বব্যাপী তেলের দরপতনে রেমিট্যান্স আহরণে ভাটা পড়েছে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ দেশ ভারতেও। এক বছরে অন্তত ২.২ শতাংশ কম রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে গত মার্চ মাস পর্যন্ত। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে এ অর্থ বছরে ভারতের প্রায় ৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশের প্রায় ৩.৫ শতাংশ কম রেমিট্যান্স আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে।