তেলের দাম ১১ বছরে সর্বনিম্ন
বিশ্ব বাজারে ব্যারেল প্রতি জ্বালানি তেলের দাম কমতে কমতে এখন ৩৬ ডলার ছুঁই ছুঁই করছে।
সরবরাহ যে হারে বাড়ছে, ততটা চাহিদা না থাকায় প্রতিদিনই দাম কমছে। এমন পরিস্থিতিতে দাম আরও কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জ্বালানি তেলের দাম ২০০৪ সালের পর এতটা নিচে কখনও নামেনি। এমনকি ২০০৮ সালের বিশ্ব মন্দার সময়ও দাম এতটা কমেনি। বিশ্ববাজার এখন চাহিদার অতিরিক্ত অপরিশোধিত তেলের ওপর ভাসছে।
তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে ৪০ বছর পর তেল রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্তের কয়েক দিনের মাথায় আবার তেলের দাম কমতে শুরু করে।
ইউরোপিয়ান তেলের বাজারে কেনাবেচা হওয়া ব্রেন্ট ক্রুড সোমবার লেনদেন শুরুর এক পর্যায়ে ব্যারেল প্রতি ৩৬ দশমিক পাঁচ ডলারে নেমে যায়। এ দর ২০০৪ সালের মে মাসের পর সর্বনিম্ন। তবে সপ্তাহের লেনদেন শুরুর দিনের মধ্যভাগে ফেব্রুয়ারিতে সরবরাহ করা এই তেলের দাম কিছুটা বেড়ে ৩৬ দশমিক ২৪ ডলার হয়েছে। শুক্রবার দিন শেষে তেলের দামের চেয়ে এর পরিমান ৬৪ সেন্ট কম। ২০০৮ সালে ক্রিসমাস এর আগে তেলের দাম ৩৬ দশমিক ২০ মার্কিন ডলারে নেমেছিল।
সোমবার ব্রেন্ট ক্রুডের এ দরের বিপরীতে যুক্তরাস্ট্রের বাজারে লেনদেন হওয়া ওয়েষ্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটেও দাম কমেছে। সেখানে প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয়েছে ৩৪ দশমিক ১২ ডলারে, যা ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির পর সর্বনিন্ম।
তেলের দাম কমায় আমদানিকারক দেশগুলোর মুখে হাসি ফুটলেও প্রধান তেল সরবরাহকারী দেশগুলো চাপের মধ্যে পড়েছে। গত দেড় বছরের বেশি সময় ক্রমাগত দাম কমছে। ২০০১৪ সালের জুনে ব্যারেল প্রতি ১১৫ ডলারে কেনাবেচা হয়েছিল। এক বছর আগে দাম নেমেছিল ৬০ ডলারে।
ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর থেকে বিশ্লেষকরা ধারণা প্রকাশ করছেন বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ আরও বাড়বে। এর সঙ্গে রফতানির বাজারে যুক্তরাস্ট্রের প্রবেশ আরও বাড়াবে। এতে আগামী বছরে দাম আরও কমবে বলে তাদের ধারণা।
গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, নিন্মমুখী এ দাম আরও কমে তলানিতে এসে ঠেকবে।
যুক্তরাস্ট্রের তেল রফতানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পরের দিন দাম একটু বেড়েছিল। তবে শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেশটির তেলক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন আরও বাড়তে থাকায় সবার মধ্যে সরবরাহ আরও বেড়ে যাওয়া অস্বস্তি তৈরি হয়। দেশটির উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ানোর কারণেই মূলত নিম্নমুখী প্রবণতা কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে সম্মত হয়নি। ১২ দেশের জোটটি দৈনিক ৩০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। এ কারণে দাম ক্রমে নিচের দিকে নামছে। ক্রমাগত কমতে থাকায় তেল উৎপাদনকারী অনেক দেশ তাদের বাজেট কাটছাট করতেও বাধ্য হয়েছে।