তেল আমদানিতে জবাবদিহিতা চায় না

সরাসরি জ্বালানি তেল (ফার্নেস) আমদানির ক্ষেত্রে বিপিসির জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে চায় না বেসরকারি খাতের ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। সম্প্রতি ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে সরাসরি তেল আমদানির অনুমতি দিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। কিন্তু তেল আমাদানীতে বিপিসির কাছ থেকে অনাপত্তিপত্রও নিতে চান না উদ্যোক্তারা। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব এসেছে জ্বালানি বিভাগে। শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরাসরি তেল আমদানি করা হলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)  অর্থ সাশ্রয়ের আশা করলেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বিদ্যুৎউত্পাদনের জন্য বেসরকারি খাতে তেল আমদানির বিষয়ে আগেই নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ হিসেবে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদনের ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর আগেও ৫টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন মেয়াদে অনুমোদন দেয়া হয়। এ দফায় এক বছরের জন্য অনুমোদন পাচ্ছে কেন্দ্রগুলো।

সম্প্রতি বিদ্যুৎবিভাগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জানানো হয়, সরাসরি তেল আমদানির ক্ষেত্রে বিপিসি আপত্তি জানালেও তাদের আপত্তি যৌক্তিক মনে না হওয়ায় কেন্দ্রগুলোকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পিডিবি জানায়, সরাসরি আমদানিকৃত প্রতি লিটার ফার্নেসে পিডিবির ব্যয় হয় ৫৪ টাকা ৭৮ পয়সা। আর বিপিসির কাছ থেকে কিনতে ব্যয় হয় ৬০ টাকা ৯৫ পয়সা। দাম কিছুটা ওঠা-নামা করলেও প্রতি লিটারে ৪ থেকে ৫ টাকা সাশ্রয় হবে। কিন্তু বিপিসি বলছে, প্রতি লিটার ফার্নেসে বিপিসিকে শুল্ক দিতে হয় ৭ টাকা। আর বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা পাচ্ছে। একইভাবে বিপিসির শুল্ক মওকুফ করা হলে তারাও ৫৩ থেকে ৫৪ টাকায় ফার্নেস সরবরাহ করতে পারে। সরাসরি আমদানির সুযোগ পাওয়ায় বিপিসির অবকাঠামো পড়ে থাকায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত বছর ফার্নেস থেকে ১৬০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে বিপিসি। কেরোসিন ও ডিজেলের ঘাটতি মেটাতে সহায়তা করেছে এ মুনাফা। সরাসরি আমদানির ফলে বিপিসির মুনাফা কমবে।

এ বিষয়ে জ্বালানি সচিব বলেন, পেট্রোলিয়াম আইন অনুযায়ি বিপিসির বাইরে কেউ জ্বালানি তেল আমদানি করে ব্যবসা করতে পারবে না। যদি কেউ বাইরে ব্যবসা না করে শুধুমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য তেল আমদানি করে সেক্ষেত্রে সে তেল আমদানি করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও বিপিসির নজরদারি থাকবে।

২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য অনুমোদন পাওয়া ছয়টি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি অরিয়ন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। আইইএল কনসোর্টিয়াম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের মেঘনাঘাট ১০০ মেগাওয়াট ও ডাচ্-বাংলা পাওয়ারের সিদ্ধিরগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট কেন্দ্র দু’টির চাহিদা ১ লাখ ৩০ হাজার ও ১ লাখ ৪০ হাজার টন। একই গ্রুপের ডিজিটাল পাওয়ারের গগননগর ১০২ মেগাওয়াট কেন্দ্রের চাহিদা ১ লাখ ৮০ হাজার টন। এছাড়া ইসিপিভি চিটাগাংয়ের পটিয়া ১০৮ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির ১ লাখ ৮০ হাজার, বারকা পতেঙ্গা পাওয়ারের ৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির ৯০ হাজার ও অ্যাকন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের জুলদা ১০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির চাহিদা ১ লাখ ৩০ হাজার টন তেল।

আগে অনুমোদন পাওয়া কেন্দ্রগুলো হচ্ছে-সামিট নারায়ণগঞ্জ ১০২ মেগাওয়াট, খুলনা পাওয়ার কোম্পানির খুলনা ১১০, খুলনা পাওয়ার কোম্পানির ইউনিট ২-এর ১১৫ ও খান জাহান আলী পাওয়ার কোম্পানির নোয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রটি আগামী ডিসেম্বর ও বাকি তিনটি কেন্দ্র জুন পর্যন্ত অনুমোদন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে আবেদনের ভিত্তিতে এগুলোর মেয়াদ আরো বাড়ানো হবে।