ত্রিপুরা-আসামে গ্যাস দিতে কুতুবদিয়ায় টার্মিনাল চায় ভারত
ভারত চট্টগ্রামের কুতুবদিয়া দ্বীপে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল করার প্রস্তাব দিয়েছে। এই টার্মিনাল ব্যবহার করে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বোতল গ্যাস সরবরাহ করতে চায়। আলোচনা সাপেক্ষে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে বাংলাদেশ জানিয়েছে।
সোমবার দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ভারত জ্বালানি সংলাপে এবিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী বৃহষ্পতিবার এনার্জি বাংলাকে এ প্রস্তাব বিষয়ে নিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশ ভারত থেকে যে জ্বালানি তেল আমদানি করবে তার দাম নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ‘টাপি’ গ্যাস পাইপ লাইনে বাংলাদেশ যুক্ত হলে ভারতের আপত্তি নেই। অন্যদিকে ভারত আপাতত বাংলাদেশকে ত্রিপুরা থেকে পাইপে গ্যাস রপ্তানি করবে না বলে জানিয়েছে।
কুতুবদিয়াতে টার্মিনাল করার জন্য সমীক্ষা করা হবে। সমীক্ষার ফলাফলের পরে এবিষয়ে উচ্চপর্যায়ের নীতি নির্ধারকরা এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
জ্বালানি সচিব বলেন, ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের দ্বিপাক্ষিক জ্বালানির সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।জ্বালানি তেলের পরিবহন খরচ নির্ধারনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
সচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে বাংলাদেশের জ্বালানি বিভাগের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী এবং ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস সচিব কে ডি ত্রিপাঠি উভয় দেশের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে দুদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক জ্বালানি স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আগামী জানুয়ারি মাসে ঢাকায় এনিয়ে পরের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশ পাইপ লাইনে গ্যাস আমদানি করতে চায়। কিন্তু ভারত আপাতত গ্যাস রপ্তানি করবে না। তবে এই গ্যাস দিয়ে উৎপাদন করা বিদ্যুৎ থেকে বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট রপ্তানি করছে ভারত। ত্রিপুরা থেকে চার কিলোমিটার পাইপ হলেই বাংলাদেশ গ্যাস আমদানি করতে পারে। ভারতে চাহিদার তুলনায় গ্যাস কম বলে রপ্তানি করবে না।
ত্রিপুরাতে এখনই চাহিদা থেকে কম গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। সে জন্য বর্তমান মজুদ থেকে গ্যাস দেয়া সম্ভব নয় বলে ভারতের সচিব জানিয়েছেন।
ভারতের নুমালিগড় থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে ডিজেল আমদানির দাম নির্ধারন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু মতৈক্যে পৌছানো যায়নি। বৈঠকে একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি পর্যালোচনা শেষে যে প্রতিবেদন দেবে সে অনুযায়ি এই তেলের দাম নির্ধারণ করা হবে। এরআগে ভারতের প্রেটোলিয়াম মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের সময় ব্যারেল প্রতি গড়ে সাড়ে পাঁচ ডলার করে পরিবহন খরচের প্রস্তাব করেছিল। এই দামের উপর ভিত্তি করেই সমীক্ষা করবে কমিটি। ভারত জ্বালানি তেল পরিবহনে যে দাম চাইছে তা অনেক বেশি বলে মনে করছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে এক পর্ব তেল আমদানি করা হয়েছে। সেখানে পরিবহন খরচ অনেক বেশি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষঠরা।
গ্যাস ও কয়লা খনি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৌশল বিষয়ে বাংলাদেশের জনবলকে ভারত প্রশিক্ষণ দেবে। পর্যায়ক্রমে এই প্রশিক্ষণ চলতে থাকবে।
তুর্কমেনিস্তান থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হয়ে ভারত (তুর্কমেনিস্তান-আফগানিস্তান-পাকিস্তান-ভারত -টিএপিআই) পর্যন্ত গ্যাস পাইপ লাইন হচ্ছে। ঐ চার দেশের মধ্যে এবিষয়ে চুক্তি হয়েছে। তুর্কমেনিস্তানে পাইপ স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ এই পাইপ লাইনে যুক্ত হতে চায়। বাংলাদেশে এই পাইপ লাইনে যুক্ত হলে ভারতের আপত্তি নেই বলে জানানো হয়েছে। ভারত এবিষয়ে সহায়তা করবে।