ত্রিপুরা থেকে আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের জন্য আরও বিদ্যুৎ লাগবে। ভারতের ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আনতে দ্রুত সময়ে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে বলে তিনি আশা করেন।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিদ্যুৎ, পল্লী ও নগর উন্নয়ন ও পরিবহন মন্ত্রী মানিক দে রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এতথ্য জানান।
ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানীর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের কর্মকর্তারা শুল্ক ও অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত করেছেন বলে জানতে পেরে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, উভয় পক্ষ বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করার জন্য যথাশিঘ্র বিদ্যুৎ ক্রয় ও সরবরাহ সংক্রান্ত অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবে।
দুটি দেশের মধ্যে স্থল সীমান্ত চুক্তির পর ছিটমহলগুলো বিনিময়ের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে এই ইস্যুটির মীমাংসা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্থান এবং তাঁর সরকার দেশে আরও শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বেশ কিছু সীমান্ত হাট স্থাপন করার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই ধরণের পদক্ষেপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার রেলপথগুলো বাংলাদেশ পুনরায় খুলে দিতে চায়। রেল যোগাযোগ আরও কার্যকর করার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেলপথে ডুয়েল গজ রেল লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করার লক্ষ্যে ভারত চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত ও তাদের জনগণের মূল্যবান অবদানের কথা স্মরণ করেন এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, সরকার ও জনগণ ও বিশেষ করে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের দৃঢ় অবস্থান ও ‘জিরো টলারেন্স নীতির’ বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেছেন, কোন দেশের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য বাংলাদেশের মাটি কাউকে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে কোন ধরনের বিদ্রোহ বরদাস্ত করবো না। আমরা এ অঞ্চলে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই।’
ত্রিপুরার মন্ত্রী ২০১২ সালে জানুয়ারি মাসে ত্রিপুরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর এবং আগরতলায় প্রায় এক লাখ লোকের সমাবেশে তাঁর ভাষণ দেয়ার কথা স্মরণ করেন।
এ প্রসঙ্গে মানিক দে সমাবেশ অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানীর বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরা থেকে শিগগির বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।
ত্রিপুরার মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কুমিল্লা সীমান্তের কাছে ত্রিপুরায় মনারচরে রাজ্য সরকার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে।
ত্রিপুরার মন্ত্রী এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাপক সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নজিরবিহীন উন্নয়ন সাধন করেছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম এসময় উপস্থিত ছিলেন।