বাড়তি বিদ্যুৎ ভারতে রপ্তানির উদ্যোগ
বাড়তি বিদ্যুৎ ভারতে রপ্তানি করতে চাই বাংলাদেশ। আর ভারতের ত্রিপুরা থেকে ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি না করে পঞ্চগড় অথবা সৈয়দপুর দিয়ে আনতে চাই। এবিষয়ে কারিগরি দিক যাচাই শুরু হয়েছে।
বিদ্যুৎখাতে সহযোগিতা বিষয়ক বাংলাদেশ ভারত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে এসব বিষয় আলোচনা হয়েছে। আজ সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই কমিটির ১৭ তম বৈঠক হয়। এতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও ভারতের বিদ্যুৎ সচিব সুভাষ চন্দ্র গার্গ নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ভারত চলমান বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
ভারতের সাথে বিদ্যুৎ আমদানি রপ্তানি চুক্তি আছে। সেই চুক্তি অনুযায়ি বাংলাদেশ ভারত থেকে এখন বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এবার বাংলাদেশ চাইছে তার বাড়তি বিদ্যুৎ ভারতে রপ্তানি করতে। বাংলাদেশের এমন প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। শীতের সময় কিম্বা বাংলাদেশে কম চাহিদার সময় এই বিদ্যুৎ রপ্তানি করা হবে।
এবিষয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সচিব বলেন, এটা শুধু বাংলাদেশের বিষয় নয়। পৃথিবীতে সব জায়গাতে এমন বাড়তি বিদ্যুৎ থাকে। সেই বিদ্যুৎ কীভাবে ব্যবহার করা যায় তার উদ্যোগ চলছে। আমরাও সেই উদ্যোগ নিয়েছি।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা আছে। কিন্তু সর্বোচ্চ গড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা আছে। বাড়তি বিদ্যুৎ অলস থাকছে। তাই বাড়তি বিদ্যুৎ রপ্তানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ভারতের সূর্যমনিনগর থেকে কুমিল্লা (উত্তর) হয়ে ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন দিয়ে সরকারিভাবে এনটিপিসি’র কেন্দ্র থেকে দীর্ঘমেয়াদে ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কথা ছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশের কুমিল্লা অঞ্চলে কোন বিদ্যুৎ ঘাটতি নেই। জ্বালানি সরবরাহও স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের উত্তরাঞ্চলে দিনাজপুর রংপুর এলাকায় বিদ্যুৎ সমস্যা আছে। তাছাড়া সেখানের বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে বেশিরভাগ ডিজেল চালিত কেন্দ্র চালাতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ বেশি। অথচ কুমিল্লা অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় বেশিরভাগ গ্যাস চালিত কেন্দ্র থেকে। এই খরচের বিষয় বিবেচনা করেও কুমিল্লা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি নিরুৎসাহিত করছে সরকার।
বৈঠকে ভারতের বিদ্যুৎ আমদানি রপ্তানি বিষয়ে নির্দেশনা ও আইন, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে সকল ধরনের সিডি, ট্যাক্স ও ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া, রাজনৈতিক কারণে বা ভারতীয় আইন পরিবর্তনের কারণে আর্থিক কোন পরিবর্তন হলে তা থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ভারতে এবং ভারতের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতে অংশ নেয়া, জিএমআর কর্তৃক নেপালে উৎপাদিত জল বিদ্যুৎ ভারতের এনভিভিএন এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আমদানির বর্তমান অবস্থা, বাংলাদেশ ভারত যৌখভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের সম্ভাবনা, ভুটানের পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশ ভারত ও ভূটানের যৌথ বিনিয়োগ এবং সেই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আমদানির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন দুই দেশের সচিব।
আহমদ কায়কাউস বলেন, বাংলাদেশ ভারত বিদ্যুৎ সহযোগিতা দিনদিন বাড়ছে। ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়। কোন কোন খাতে কীভাবে করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, কুমিল্লার পরিবর্তে পঞ্চগড় অথবা সৈয়দপুর দিয়ে বিদ্যুৎ আমদানি করা যায় কিনা তা পর্যালোচনা হচ্ছে। আর আমাদের বাড়তি বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
সুভাষ চন্দ্র গার্গ বলেন, আমরা আলোচনা করছি। আশা করি দু দেশের ভালো হয় এমন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। কারিগরি কমিটির প্রতিবেদনের পর এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বৈঠকে রামপালের ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা হয়। বলা হয়, নিদিষ্ট সময়ের অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যেই এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।
এরআগে বোরবার বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির ১৭ তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে স্টিয়ারিং কমিটির পরে বৈঠক ভারতে হবে।