দাম বেশি: তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ চায়নার যৌথ সৌর বিদ্যুৎ

টেকনাফে ২৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা (বুধবার, ২০শে আগষ্ট, ২০২৫):

জামালপুরের মাদারগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রর নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বিদ্যুতের দাম এবং নির্মাণ খরচ তুলনামূলক বেশি এবং স্থান নির্বাচন যথাযথ না হওয়ার অভিযোগ এনে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বিদ্যুৎ বিভাগের বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এই নির্দেশ দেন। এতে এই প্রকল্পে ইতোমধ্যে যেসব অনিয়ম হয়েছে সেগুলো তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা জানান, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মেগাওয়াট প্রতি গড়ে ছয় থেকে সাড়ে ছয় কোটি টাকা খরচ হয়। কিন্তু মাদারগঞ্জে ধরা হয়েছে একুশ কোটির বেশি। ১০০ মেগাওয়াট সৌর কেন্দ্র করতে মোট খরচ ধরা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। যেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে সেখান থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ আনতে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার ট্রন্সমিশন লাইন করতে হবে। ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য ৪৭ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী নয়। এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত যে বিদ্যুৎ পিডিবি কিনবে তার দাম অন্য সৌর কেন্দ্র থেকে তুলনামূলক বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হচ্ছে, ইউনিটপ্রতি ৮ টাকা থেকে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা দাম হতে পারে। সেখানে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম ১০ টাকা থেকে ১১ টাকা নির্ধারণ হয়েছে।
পর্যালোচনা করে বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। নির্মাণ খরচ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মাধ্যমে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। খরচ বেশি দেখিয়ে যারা মূল্যায়ন করেছে সেই সব কর্মকর্তাদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পের জন্য আর অর্থ দেওয়া হবে না। কাজও বন্ধ থাকবে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বি-আর পাওয়ারজেন কোম্পানি লিমিটেড ও চীনা প্রতিষ্ঠান সিআরইসি ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড (সিআইআরই চায়না) যৌথভাবে এই কেন্দ্র নির্মাণ করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের দিকে ২০২৪ সালের ১৩ই জুন মাসে এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার চুক্তি হয়। এতে সিআইআরই’র অংশ ৭০ শতাংশ এবং বি-আর পাওয়ারজেনের ৩০ শতাংশ। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর কথা ছিল।
এই সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য যে খরচ ধরা গয়েছে তার মধ্যে ৩২৫ দশমিক ৬৫ একর ভূমি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, অফিস ভবন, ওয়ার্কশপ, ওয়্যারহাউস, আনসার ব্যারাক নির্মাণ, ৮৮টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য ছোট বাড়ি বানানোর কথা।