দেশে নদ-নদীর সংখ্যা কত জানতে চেয়ে হাইকোর্টে রিট
নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রকৃত নদ-নদীর সংখ্যা কত? এই হিসাবটিও সরকারি একেক সংস্থার কাছে একেক রকম। এখন দেশের নদ-নদী রক্ষায় এর প্রকৃত সংখ্যা কত তা জানাতে হবে হাইকোর্টকে। এক রিট মামলায় এ আদেশ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে নদ-নদীকে দখলমুক্ত করতে যথাযথভাবে নদীর সীমানা নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়নে সরকারকে বলেছেন আদালতে। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. মকামরুল হোসেন মোল্লার দ্বৈত বেঞ্চ গতকাল রবিবার এই আদেশ দেন।
নদী দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে একটি সামগ্রিক কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। ওই রিটে বলা হয়, নদী সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নদীর সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন পরিসংখ্যান প্রদান করে আসছে। এর মধ্যে নদী রক্ষা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী দেশে নদীর সংখ্যা ৭৭০ এর বেশি। নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশে মোট নদী রয়েছে ৪৯৬টি। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত “বাংলাদেশের নদ-নদী” শীর্ষক প্রকাশনায় ৪০৫টি নদীর পরিচয় পাওয়া যায়।
তবে, গবেষক ম. ইনামুল হক তার নিজস্ব গবেষণায় দেশে ১ হাজার ১৮২টি নদীর তালিকা প্রস্তুত করেছেন। রিটে বলা হয়, নদীর সংখ্যা সঠিক না হওয়ায় দখলদারের সংখ্যাও সঠিকভাবে চিহ্নিত সম্ভব নয়। ফলশ্রুতিতে নদী রক্ষা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী দখলদারের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৩৯০। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী এ সংখ্যা আরও অধিক।
সম্প্রতি নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী সারা দেশে ৬৫ হাজার ১২৭ জন নদীর দখলদার আছে বলে সংসদে জানান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ দখলদারদের কারনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে নদী। সীমানা নির্ধারন সঠিকভাবে না করায় অবৈধ দখলদারও মহাউৎসবে নদী দখল করে যাচ্ছে। যাদের কাজ এই দখলদারদের ঠেকানো বা উচ্ছেদ করা তারা নিষ্ক্রিয়। ফলে দখল হয়ে যাচ্ছে নদী। এ কারনে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ দরকার।
রিট আবেদনের উপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট অন্তবর্তিকালীন আদেশ ও রুল জারি করে। আদেশে আগামী বছরের ৫ জুনের মধ্যে দেশের সকল নদীর একটি সম্পূর্ণ তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া নদীকে দখলমুক্ত ও যথাযথভাবে নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে সময় ও যথাযথ প্রক্রিয়া বর্ণনাপূর্বক কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়, নদী রক্ষা কমিশন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও সকল বিভাগীয় কমিশনারগণকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এছাড়া ঢাকার আশপাশে চার নদী রক্ষায় হাইকোর্টের দুটি রায় অনুসরণপূর্বক তুরাগ নদীর সীমানা প্রাচীর চিহ্নিত করতে আদালত বিবাদীদের নির্দেশ দেয়। অন্তবর্তিকালীন আদেশের পাশাপাশি আইনবহির্ভুত দখল থেকে নদীসমূহকে রক্ষা, নদী দখলকারীদের উচ্ছেদ এবং তুরাগ নদীর সীমানা পিলার সঠিকভাবে স্থাপনের ব্যর্থতা কেন অংসাবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে হাইকোর্টের দুটি রায় অনুসারে সকল নদীর সীমানা সিএস জরিপ অনুযায়ী দৃশ্যতভাবে চিহ্নিতকরণ এবং ভবিষৎ দখলরোধে সাইন, সিম্বল ও বৃক্ষায়নের মাধ্যমে নদী সীমানা চিহ্নিতকরণ এর নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।