নতুন হচ্ছে বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা
নতুন করে বিদ্যুৎখাতের মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। আমদানি করা জ্বালানির উপর নির্ভর করে এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ি ২০৪০ সালে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ৬৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। প্রতিবছর গড়ে আট ভাগ করে চাহিদা বাড়বে।
বাংলাদেশের এই বিদ্যুৎ সমস্যা কীভাবে পুরণ করা যায় তার পরিকল্পনা করে দিচ্ছে জাইকা। প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। নয় মাসের মধ্যে পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করা হবে। একবছরের মধ্যে চূড়ান্ত পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। মঙ্গলবার বিদ্যুৎভবনে জাইকা তাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। এসময় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম, জাইকা বাংলাদেশ প্রধান মিকিও হাতিদাসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান প্রকল্পগুলোকে সাথে নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ি আগানো হবে। চূড়ান্ত পরিকল্পনা পাওয়ার পরে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) বাংলাদেশ প্রধান মিকিও হাতিদা বলেন, বাংলাদেশে উপযোগি করে পরিকল্পনা সাজানো হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে অনেক বিনিয়োগ প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকারের সাথে ঋণ দাতা সংস্থাগুলোর সম্পর্ক ভাল, বাংলাদেশ এই অর্থ যোগার করা সম্ভব। জাইকাও বিনিয়োগ করতে সম্মত আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়বে। এই চাহিদা মেটাতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। স্থানীয় গ্যাসের সাথে আমদানি করা এলএনজি ও কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা বাংলাদেশের জন্য ভাল হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এর আগে বিদ্যুৎ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। সরকারকে রূপরেখা দিতে ২০১০ সালে মহাপরিকল্পনা করে জাইকা। এই পরিকল্পনায় ভবিষ্যতে প্রতি বছরে বিদ্যুত চাহিদা নির্ধারণ এবং এর প্রেক্ষিতে বিদ্যুত উৎপাদনের বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহনের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো ভবিষ্যতে কোন ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করবে তারও বর্ণনা আছে। যদিও সেই পরিকল্পনা অনুযায়ি তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ি, ২০২১ সালে দেশের মোট বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াবে ১৮ হাজার ৮৩৮ মেগাওয়াট। এই সময়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাত শতাংশ। এই হিসেবে ২০১৫ সালে দুই হাজার ৯৩৪ মেগাওয়াট, ২০১৬ সালে দুই হাজার ১৪৮ মেগাওয়াট, ২০১৭ সালে এক হাজার ২৭১ মেগাওয়াট, ২০১৮ সালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, ২০১৯ সালে দুই হাজার ৮৭ মেগাওয়াট, ২০২০ সালে দুই হাজার মেগাওয়াট এবং ২০২১ সালে তিন হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি খাতে দশ হাজার ২৪৬ মেগাওয়াট এবং বেসরকারি খাতে সাত হাজার ৬৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী আট বছরে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে পাঁচ হাজার ১৮৬ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ও দেড় কোটি টন জ্বালানী তেল প্রয়োজন হবে।
বিশাল এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমদানি করা জ্বালানির উপর বেশি নির্ভর করতে হবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থান করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। ২৪ হাজার মেগাওয়াটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নেয়া পরিকল্পনায়ও দেশীয় কয়লা ব্যবহারের তেমন উদ্যোগ নেই। কেবল বড়পুকুরিয়া ২৭৫ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুত কেন্দ্রে দেশীয় কয়লা ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে ছয় হাজার ৯৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে আমদানি করা কয়লার উপর নির্ভর করা হচ্ছে।