নরওয়ে রামপালে অর্থলগ্নি করেনি: প্রতিমন্ত্রী

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নরওয়ের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। নরওয়ে সরকার এ প্রকল্পে কোনো অর্থলগ্নি করেনি। রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ক্ষতিরও কোন শঙ্কা নেই।
রোববার জাতীয় সংসদে  জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তারাই পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়েও ষড়যন্ত্র করেছিল। এরা দেশের উন্নয়ন ঠেকাতেই বিভ্রান্তিকর কথা বলছে। এসব না বলে বিরোধীদের সরকারের উন্নয়নের পথে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে ৪৬ ভাগেরও বেশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। দেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিতে আগামী ৫০ বছরকে সামনে রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে মহাপরিকল্পনা করে আগানো হচ্ছে। বিতর্ক সৃষ্টিকারী অনেকেই পদ্মা সেতু নির্মাণের সময়ও বলেছিল, পদ্মা সেতু হলে ইলিশের প্রজনন কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে কমে তো নাই-ই, বরং বেড়েছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এতে অর্থলগ্নিকারী ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গেও নরওয়ে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে নরওয়ে সরকারের সার্বভৌম ফান্ড থেকে কেউ অর্থ নেবে কী নেবে না, সেটা তাদের (ভারতের কোম্পানি) ব্যাপার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সর্বাধুনিক আল্টা-সুপার ক্রিটিক্যাল প্লান্ট হবে। জাপান ও ইন্দোনেশিয়াসহ বহু দেশে এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। বলা হচ্ছে- এসিড বৃষ্টি হয়ে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে! আমার প্রশ্ন, পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে নির্মিত বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনেক দিন ধরেই চালু রয়েছে। আজ পর্যন্ত সেখানে কি কোনো এসিড বৃষ্টি হয়েছে?
গ্রিন পিসের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওই সংগঠনটি বলছে এ কেন্দ্রের কারণে নাকি ৬ হাজার শিশু বিকলাঙ্গ হয়ে যাবে! তাহলে মহেশখালীতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, তাতে কী চট্টগ্রামের লাখ লাখ শিশু মারা যাবে? কক্সবাজার ধ্বংস হয়ে যাবে? তিনি বলেন, অনেকে অনেক কথা বলছেন, কিন্তু আমরা বৈজ্ঞানিক তথ্য ছাড়া কোনো কথা বলা ঠিক মনে করি না। সুন্দরবনে একটি প্রজাপতিরও পরিবর্তন হচ্ছে কিনা, আমরা তা পর্যবেক্ষণ করছি।

সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর অন্য এক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, এখনই জ্বালানি তেলের দাম কমছে না। এখনই দাম কমালে ঋণ করে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও এক বছর ধরে মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। দাম কমালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) আবারও লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি তেলের দাম কমালে তার সুফল সাধারণ জনগণ সরাসরি ভোগ করতে পারে না। বর্তমানে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিপিসি কিছু উন্নয়ন কাজ হতে নিয়েছে। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে একদিকে বিপিসির সক্ষমতা অর্জন ব্যাহত হবে, অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাধাগ্রস্ত হবে। তাই সামগ্রিক বিবেচনায় আপাতত জ্বালানি তেলের দাম কমানো উচিত হবে না।
আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ জানান, দেশে যে পরিমাণ জ্বালানি রয়েছে তা চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। দেশে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৫৬ লাখ টন। এর মধ্যে ৪ দশমিক ২৭ লাখ টন অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ৫১.৭৩ লাখ টন বিভিন্ন গ্রেডের জ্বালানি তেল আমদানি করে দেশের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। বিগত ৯ বছরে ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৮৭৭ টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছে। তবে অকটেন, পেট্রুল এবং কেরোসিনের চাহিদার সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পূরণ হচ্ছে।
নসরুল হামিদ সংসদকে জানান, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩ হাজার ৪শ’ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে উত্তোলিত হচ্ছে প্রায় দুই হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ দেশে দৈনিক প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে।
তেল-গ্যাস ও কয়লায় পরিকল্পনা : লুৎফা তাহেরের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে দেশজ প্রাথমিক জ্বালানি তথা তেল, গ্যাস ও কয়লার অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও উৎপাদনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ২০২১ সাল নাগাদ ৫৭টি কূপ ও ৩৩টি উন্নয়ন কূপ খনন করা হবে। এছাড়া ২৩টি পুরাতন কূপের ওয়ার্কওভার করা হবে। এ সব কার্যক্রমের ফলে দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া গভীর ও অগভীর সমুদ্রে সার্ভে ও তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে।’
বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জঙ্গি হামলা ঠেকাতে সেনা মোতায়েন : ফরিদুল হক খানের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জঙ্গি হামলাসহ যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ‘কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা-২০১৩’ এর নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নিরাপত্তা নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সংস্থা-কোম্পানিগুলোর মোট ১৭৪টি স্থাপনাকে কেপিআই হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আরও ২১টি স্থাপনাকে কেপিআই হিসেবে ঘোষণার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। ১০ গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সেনাসদস্য মোতায়েন আছে।