নাইকোর বিরুদ্ধে বাপেক্সের মামলা: ৯ হাজার কোটি টাকা দাবি
কানাডার কোম্পানি নাইকোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। মামলায় আগের অভিযোগ বাতিল এবং প্রায় সোয়া নয় হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।
বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটে (ইকসিড) এই মামলা করা হয়।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে গ্যাসক্ষেত্র ইজারা পেতে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি কানাডার আদালতে স্বীকার করেছিল নাইকো। ওই মামলার সূত্র এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দিয়ে বিষ্ফোরন হওয়া গ্যাস ক্ষেত্র এলাকা পর্যালোচনা করে মামলার তথ্য উপাত্ত ইকসিডে জমা দেয়া হয়েছে।
দাখিলকৃত তথ্য-প্রমাণের মধ্যে রয়েছে- বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের ব্যাংক চেকের অনুলিপি, বিবৃতি ও সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক বিবরণী।
গত ২৫ মার্চ বাপেক্সের আবেদন দাখিলের পর ইকসিড এ সম্পর্কে নাইকোর বক্তব্য চেয়ে রুল জারি করেছে।
বাপেক্সের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রের দুইটি কূপে বিস্ফোরণের দায়ে নাইকোর বিরুদ্ধে ১১৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় নয় হাজার ১৮৯ কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০৫ কোটি টাকা দেশের ক্ষতি এবং ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলার বাপেক্সের ক্ষতি হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের অর্থের সাথে সুদও যুক্ত হবে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবিষয়ে বলেন, নাইকোর দুর্নীতির বেশ কিছু দালিলিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেগুলোকে আমলে নিয়ে ক্ষতিপূরণের মামলা ইকসিডে দায়ের করা হয়েছে। মামলার রায় আমাদের পক্ষে আসবে বলে আশাবাদী।
২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন সুনামগঞ্জের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে দুইবার বিস্ফোরণ ঘটে।
তদন্ত কমিটি নাইকোর অদক্ষ খনন প্রক্রিয়ার কারণেই বিস্ফোরণ-দুর্ঘটনা হয়েছিল বলে জানিয়েছিল। এরপর সরকার ও পেট্রোবাংলা ২০০৮ সালের ১৫ জুন নাইকোর কাছে ৭৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করে। ওই মামলাটি চলমান । এদিকে চলতি মে মাসেই কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানিশেষে নাইকোর সাথে করা চুক্তির কার্যকরিতা স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। এর আগে পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা মামলায় হাইকোর্ট রায় দেয়, ক্ষতিপূরণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত নাইকোকে ফেনী গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাসের দাম শোধ করা যাবে না। দেশের আদালতে নাইকোর বিরুদ্ধে সরকার ও বেসরকারি সংস্থা মামলা করার পর ২০১০ সালে নাইকো ইকসিডে পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের বিরুদ্ধে পাল্টা দুইটি মামলা করে। ইকসিড ২০১৪ সালে একটি আদেশে নাইকোর আটকে রাখা টাকা ফেরত দিতে বলে। রায় বিপক্ষে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনজীবী ও কর্মকর্তাদের গাফিলতি ছিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এরপর আইনজীবী পাল্টিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার দাবি জানায় বাংলাদেশ সরকার ও বাপেক্স। গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাজ্যে ইকসিডের প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি হয়। ওই শুনানির রায় অপেক্ষমাণ থাকা অবস্থায় এবার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা দায়ের করল বাপেক্স।