নাইকোর সাথে মামলায় হারলো পেট্রোবাংলা
নাইকোর সাথে করা আন্তর্জাতিক আদালতের এক মামলায় হারলো বাংলাদেশ। যাথযথ তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন না করায় এই হার। আন্তর্জাতিক আদালত ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম বাবদ নাইকোকে ২৭৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা পরিশোধ করতে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দিয়েছে।
লন্ডনে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালত ইকসিড এই আদেশ দিয়েছে। গত সোমবার এক বিবৃতিতে নাইকো রিসোর্সেস লিমিটেড এ তথ্য জানায়।
গত ২৬ মে পেট্রোবাংলার আপিল শুনানি শেষে আগের আদেশই বহাল রেখেছে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটস (ইকসিড)।
এবিষয়ে পেট্রোবাংলার এক উর্দ্ধতন কর্তকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
২০০৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বাবদ নাইকোকে দেশি ও আন্তর্জাতিক মুদ্রায় ২৭৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা দিতে হবে পেট্রোবাংলাকে। এর মধ্যে ১৯৫ কোটি টাকা ডলারে ও বাকি ১৪ কোটি টাকা বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। ওই টাকার সঙ্গে ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত সুদ বাবদ ৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দিতে হবে।এর মধ্যে ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ডলারে এবং পাঁচ কোটি টাকা বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া ২০১৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সময়ের জন্য লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) চেয়ে দুই শতাংশ অধিক হারে ডলারে ও পাঁচ শতাংশ হারে বাংলাদেশি টাকায় সুদ দিতে হবে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে এ পাওনা পরিশোধ করতে বলেছে ইকসিড। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি আদালতের পাল্টা কোনো আদেশ গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে পেট্রোবাংলা ও নাইকোর মধ্যে সমঝোতা করতে পারে।
পেট্রোবাংলার কাছে এই অর্থ নাইকো আগে থেকেই পাওনা আছে। পেট্রোবাংলাও এই অর্থ দিতে সম্মত আছে। তবে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র ক্ষতিপূরণের পরে। টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খননের সময় ২০০৫ সালের ৭ই জানুয়ারি প্রথম দফা এবং একই বছরের ২৪শে জুন দ্বিতীয় দফা বিস্ফোরণ ঘটে। নাইকোর গাফিলতির কারণে বিস্ফোরণ হয়েছিল বলে একাধিক কমিটি সে সময় জানায়। চুক্তি অনুযায়ি নাইকোর ক্ষতিপুরণ দেয়ার কথা থাকলেও তারা তা দিতে সম্মত হয়নি। এই ক্ষতি আদায়ের জন্য পেট্রোবাংলা নাইকোর ফেনী ক্ষেত্রর পাওনা অর্থ পরিশোধ করা বন্ধ করে দেয়।
এই অবস্থায় বাংলাদেশের আদালতে ৭৪৬ কোটি টাকা বা ৩৫ দশমিক ৫৩৩ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপুরণ চেয়ে নাইকোর বিরুদ্ধে মামলা করে পেট্রোবাংলা। আদালত ক্ষতিপুরণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত নাইকোকে ইজারা দেয়া ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া গ্যাসের দাম না দেয়ার আদেশ দেয়। একই সাথে নাইকোর সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন সাময়িক বন্ধ করে দেয়।
পরে নাইকো আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে ২০১০ সালের ১২ই এপ্রিল এবং ১৬ই জুন দুটি মামলা করে। একটি গ্যাসের বকেয়া বিল আদায় সংক্রান্ত (আরবি/১০/১৮) অন্যটি টেংরাটিলা বিষ্ফোরণের ক্ষতিপূরণ থেকে অব্যাহতি চেয়ে (আরবি/১০/১১)।
২০১৪ সালে ১১ সেপ্টেম্বর ইকসিড নাইকোর গ্যাসের দাম পরিশোধ করার নির্দেশ দেয় পেট্রোবাংলাকে। কিন্তু আদালতে আপিল করে পেট্রোবাংলা। আপিল বিবেচনার পর গত ২৬ মে নতুন এই রায় দিয়েছে ইকসিড।