নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহার বায়ু দূষণের ‘মূল কারণ’: তাপস
নিজস্ব প্রতিবেদক/বিডিনিউজ :
ঢাকায় বায়ু দূষণের জন্য ‘নিম্নমানের জ্বালানি’ সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে মনে করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
তিনি বলেছেন, “ধুলোর জ্বালা সহ্য করা যায় না। কিন্তু লেড, ম্যাগনেসিয়ামসহ বিভিন্ন ধরনের যে বিষাক্ত পদার্থ আমরা প্রতিনিয়ত নিচ্ছি, সেটা কেউ খেয়াল করছে না।”
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ইনস্টিটিউট অব এনার্জির আয়োজনে ‘সাসটেইনেবল এনার্জি পলিসি অ্যান্ড আওয়ার লাইভলিহুড’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
‘সাসটেইনেবল এনার্জি উইক- ২০২৩’- এর ওই অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, “বাংলাদেশে যে জ্বালানি তেল আসে সেটা নিম্নমানের। যে ডিজেল আমরা ব্যবহার করি, তা কতটা বিপজ্জনক, প্রতিদিন বায়ু দূষণের মাত্রায় সর্বোচ্চ ওপরে থাকার পরেও আমাদের উপলব্ধি আসছে না।
“উপলব্ধিতে আসছে শুধু ধুলোবালি। এই ধুলোবালি আমাদেরকে বিরক্ত করছে। কিন্তু বায়ু দূষণের ৮০ ভাগ কারণ হলো জীবাশ্ম জ্বালানি। আমরা যে তেলটা ব্যবহার করি সেটা অপরিশোধিত তেল। যেখানে লেড, ম্যাগনেসিয়াম, সালফারের মতো অনেক বিপদজ্জনক পদার্থ পাওয়া যায়। যার কারণে ঢাকা শহর ছোট শহর হওয়ার পরেও আমরা এখানে বায়ু দূষণের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছি।”
বায়ু দূষণ কয়েক বছর ধরেই ঢাকাবাসীর বড় যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুকনো মৌসুমে প্রায়ই বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষে থাকছে ঢাকা। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয় শীতে, যখন বাতাসে ধুলার অত্যাচার বেড়ে যায়।
বাতাসের মান নির্ভর করে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম-১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণের (পিএম ২.৫) ওপর, যা পরিমাপ করা হয় প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম (পার্টস পার মিলিয়ন-পিপিএম) এককে।
দূষণের মাত্রা বুঝতে পিএম ২.৫, পিএম ১০ ছাড়াও সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও গ্রাউন্ড লেভেল ওজোনে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বিবেচনা করে তৈরি করা হয় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই।
একিউআই শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে সেই এলাকার বাতাসকে ভালো বলা যায়। অথচ শুকনো মৌসুমে প্রায়ই ঢাকার বাতাসের একিউআই থাকে ২৫০ এর বেশি, যা অস্বাস্থ্যকর।
পরিবেশবিদরা বায়ু দূষণের জন্য নগরজুড়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং ইটের ভাটাকে দায়ী করেন। যত্রতত্র নির্মাণ সামগ্রী না রাখতে এবং নিয়ম মেনে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে উচ্চ আদালত থেকেও আদেশ দিতে হয়েছে।
তবে মেয়র তাপসের ভাষ্য: “মানসম্মত নয় এমন জীবাশ্ম জ্বালানি বেশি ব্যবহারের কারণে আজকে আমরা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ু দূষণগ্রস্থ শহরে পরিণত হয়েছি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে বৃহস্পতিবার ‘সাসটেইনেবল এনার্জি পলিসি অ্যান্ড আওয়ার লাইভলিহুড’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ফজলে নূর তাপস।
তিনি বলেন, “মানব সভ্যতার অভ্যুদয়ের জন্য, উত্থানের জন্য জ্বালানি ব্যবহৃত হয়। আবার এই সভ্যতাকে ধ্বংস করতে জ্বালানি একটি নিয়ামকের কাজ করে। ভেনেজুয়েলা, নাইজেরিয়া জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভরপুর। কিন্তু বর্তমানে ভেনেজুয়েলা, নাইজেরিয়া অনেকটাই দেউলিয়া রাষ্ট্র। আবার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলো এই জ্বালানির ওপরে দাঁড়িয়ে উন্নত রাষ্ট্র পরিণত হয়েছে।
“রাশিয়া-ইউক্রেইন সংঘাত সারাবিশ্বে জ্বালানির মূল্য বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। সুতরাং জ্বালানির জন্যই মানব সভ্যতা আজকের এই পর্যায়ে এসেছে। আবার এই জ্বালানির জন্যই সারাবিশ্বে যুদ্ধ-বিগ্রহ অবস্থা বিরাজ করছে।”
জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও এ সময় তুলে ধরেন তাপস।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে তিতাস গ্যাসসহ পাঁচটি বড় বড় গ্যাস ক্ষেত্র বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন। সে সময় আমাদের অর্থ ছিল না কিন্তু তিনি ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তা উপলব্ধি করেই সেগুলো কিনে নিয়েছিলেন। যে কারণে আজ অবধি আমরা গ্যাস ব্যবহার করতে পারছি।”
মেয়র বলেন, “জ্বালানির মূল কার্যক্রমই হল বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা। সৌর, পানি, বায়ু, পারমাণবিক, কয়লা- যে ধরনের জ্বালানিই হোক না কেন, এগুলোর সবই বৃহদার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। সে বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাই, দেশকে উন্নত করি।
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটাই করেছেন। তিনি সব ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করে বাংলাদেশকে আজ বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। বিগত ১৪ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৮০০ মেগাওয়াট থেকে তিনি ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছেন।”
ইনস্টিটিউট অব এনার্জি’র পরিচালক এম এস নাসিফ শামসের সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াসিকা আয়েশা খান, ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের কার্যকরি সদস্য আদেলুর রহমান, ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম ও বিইপিআরসি’র সদস্য রতন কুমার ঘোষ ‘আগামীর জ্বালানি নিরাপত্তা ও বাংলাদেশের করণীয়’ সম্পর্কে মতামত দেন।