পরমাণু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতি অনুমোদন
পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কোম্পানি গঠন করা হচ্ছে। পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীনে এই কোম্পানি গঠন করা হবে। পরমাণু বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ করবে এই কোম্পানি।
এমন বিধান রেখে নতুন নীতির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এবং ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক জাতীয় নীতি, ২০১৯’ এর খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়।
কোম্পানির না্ম হবে ’রেডিওঅ্যাকটিভ ওয়েস্ট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি (আরডব্লিউএমসি)’। বাংলাদেশের কোম্পানি আইনেই এটা গঠন করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ খসড়া নীতি বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (আরডব্লিউএমসি) গঠন করবে। বিশেষজ্ঞ এই কোম্পানির কাজ হবে বাংলাদেশের সকল তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা।
নীতিমালা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক নিয়মের মতোই বাংলাদেশেও বর্জ্য উৎপাদনকারীদের উৎপাদিত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ও ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থ পরিশোধ করতে হবে। পারমাণবিক জ্বালানির পরিমাণ যুক্তিসঙ্গতভাবে সীমিত রাখতে হবে।
ব্যবহৃত জ্বালানি অন্তত ১০ বছর সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা জ্বালানি উৎপাদনকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক । ত্রুটিপূর্ণ জ্বালানি অ্যাসেমব্লি সিল করা বাক্সে সংরক্ষণসহ পরমাণু চুল্লির রিঅ্যাকটর কোরের পরিচালন সময়কালে যে কোনো সময় আনলোড করতে হবে এমন সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখে ব্যবহৃত জ্বালানি সংরক্ষণ স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী গবেষণা চুল্লি, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট, চিকিৎসা শিল্প, খনিজ সম্পদ আহরণ, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা, প্রশিক্ষণ বা বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উৎপাদন ও ব্যবহার হবে। আল্ট্রাসনোগ্রাফির মধ্যেও সীমিত পরিসরে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা হয়।স্বা্স্থ্য, কৃষিসহ অন্যান্য যেসব ক্ষেত্রে পরমাণুর ব্যবহার আছে। যেসব জায়গাতে পরমাণুর ব্যবহার আছে এবং বর্জ্য হতে পারে তার সবই সিষ্পত্তি করবে এই কোম্পানি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, বর্জ্য উৎপাদনকারী কারা কারা আছেন, তাদের উৎপাদিত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ও ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ যে দূষণ করবে সে টাকা দেবে। এটা আন্তর্জাতিক নীতি। যে দূষণ করবে তাকে টাকা দিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
বিজ্ঞান সচিব আনো্য়ার হোসেন বলেন, তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ও পারমাণবিক জ্বালানিতে ক্ষয়ক্ষতি ও যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধের জন্য এই নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে আইএইএ-এর নির্দেশনা অনুযায়ী এগুলো পরিচালিত হবে।অ্যাটমিক এনার্জি যেহেতু স্পর্শকাতর ও বিপদজনক এনার্জি তাই এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটা নির্দেশনা দরকার। আইএইএ-এর যে নির্দেশনা আছে সেটার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সেই অনুযায়ী এই নীতিমালাটা তৈরি করা হয়েছে। এটা দিয়ে যেন কোন রকম দুর্ঘটনা বা বিপদের মধ্যে না পড়তে হয়, সেটার জন্য। বর্জ্যটা ব্যবস্থাপনার জন্য বিশাল নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে।
রূপপুরে দুটো পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হচ্ছে। এটার যে বর্জ্য তা চুক্তি অনুযায়ী সরাসরি রাশিয়া নিয়ে যাবে।বাংলাদেশ এই বর্জ্য নিদিষ্ট সময়ের জন্য সংরক্ষণ করবে। তবে নিষ্পত্তি করবে না। রাশিয়ার সাথে এবিষয়ে চুক্তি হয়েছে।
সচিব বলেন, যেহেতু রাশিয়া অনেক বড় দেশ, বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের অনেক জায়গা আছে, আমাদের ওরকম জায়গা নেই, আমাদের ঘণবসতিপূর্ণ জায়গা। চুক্তিতেই বলা হয়েছে, (পারমাণবিক বর্জ্য) তারা সিল করে নিয়ে যাবে।
পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে রিঅ্যাক্টর বসানোর কাঠামো স্থাপনের কাজ শেষ। রাশিয়া এই কেন্দ্র স্থাপনের কাজ করছে।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের নানা দিক তদারকি করছে।