পরমাণু বিদ্যুতের জনবল তৈরি শুরু: রূপপুরে যোগ দিল ১০০ বিজ্ঞানি ও প্রকৌশলী

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন শুরু হয়েছে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানী লিমিটেড এ আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন একশত জন প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানি। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীদের এখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পাবনার রূপপুরে উৎসবমূখর পরিবেশে তরুণ  মেধাবী প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তারা কাজে যোগদেন। এর মধ্য দিয়েই দেশে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিজস্ব বিজ্ঞানি ও প্রকৌশলিদের কর্মযাত্রা শুরু হলো।

এই বিজ্ঞানি ও কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে রাশিয়া ও ভারতে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তারপর তারা বাংলাদেশে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় কাজ করবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জনবল নির্বাচন, পরীক্ষার ব্যবস্থা এবং প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ও রাশিয়া উভয় পক্ষ মিলে যৌথ প্রশিক্ষণ উপদেষ্টা কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
যে একশতজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারমধ্যে ৭০ জনই প্রকৌশলী। এছাড়া বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আছেন ২৪ জন। প্রশাসনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ছয়জন।
প্রকৌশলীদের স্ব স্ব শাখা নির্ধারণ করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সিভিল প্রকৌশল শাখায় ২০ জন, মেকানিক্যাল বিভাগে ২৮ জন, তড়িৎ শাখায় ২০ জন এবং কেমিক্যাল প্রকৌশল বিভাগে দু’জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মধ্যে পদার্থবিদ্যায় ১৩ জন, ফলিত পদার্থবিদ্যায় চারজন, পরমাণু প্রকৌশলে পাঁচজন এবং রসায়নে দু’জন নিয়োগ দেয়া হয়েছেন। এছাড়া প্রশাসনে মানবসম্পদ শাখায় দু’জন, অর্থ ও হিসাব শাখায় দু’জন এবং পরিবেশ শাখায় আছেন দু’জন।
নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানী লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রর প্রকল্প পরিচালক ড. শওকত আকবর বলেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী তরুণদের মেধা যাচাই করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পারমাণবিক প্রকল্পের সাধারণ চুক্তির অধীনে নিরাপদে ও পরিবেশ সম্মতভাবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য এসব বিজ্ঞানি ও প্রকৌশলিদের আর্ন্তজাতিক মানের দক্ষ করে তোলা হবে। সে জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তিনি বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নের চুক্তি অনুযায়ি প্রশিক্ষণের জন্য এসব বিজ্ঞানি ও প্রকৌশলিদের রাশিয়া ও ভারতে পাঠানো হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের ছেলেরাই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় সক্ষমতা অর্জন করবে।
২০১৭ সালের ৩০ শে নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লি বসানোর কাজের প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পরমাণু বিশ্বে প্রবেশ করে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সহায়তায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ২০০ জনের বেশি  বিজ্ঞানীকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ  দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ পাওয়া জনবলের অধিকাংশই বর্তমানে প্রকল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তি করা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে জড়িত।

বিজ্ঞান সচিব আনোয়ার হোসেন বলেন, ভবিষ্যতে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য রূপপুর প্রকল্প এলাকায় একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হবে। তখন সেখানেও উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুষ্ঠু ও নিরাপদে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রায় দুই হাজার ৭০০ জন  প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫৩৫ জন রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করবে।

এই জনবলের মধ্যে এক হাজার ৪২৪ জনকে সাধারণ চুক্তির আওতায় ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে  আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের নিরিখে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। রাশিয়া ও ভারতে এই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। নতুন নিয়োগ পাওয়াদের সকলকে চলতি মাসেই প্রশিক্ষণে পাঠানো হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে আগামী বছর ২০১৯ সালে ২৫১জন, ২০২০ সালে ৩০৯জন, ২০২১ সালে ৫০৭ জন এবং ২০২২ সালে ৮৬জনকে প্রশিক্ষণে পাঠানো হবে।

প্রশিক্ষণ নেয়া বিজ্ঞানি ও প্রকৌশলীরা প্রয়োজন অনুসারে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লাইসেন্স নেবে। তারপর রাশান ফেডারেশনের বিশেষজ্ঞদের সাথে যৌথভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবে।